ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ২৪ অক্টোবর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি এ.কে.এম ইকবাল আজাদ খুনের ঘটনায় সৃষ্ট এখানকার তীব্র উত্তেজনা বুধবার কিছুটা শিথিল হলেও জনমনে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। এদিকে খুনিদের গ্রেপ্তার ও বিচার দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডাকা অর্ধদিবস হরতাল রাতে প্রত্যাহার করা হয়েছে। জনদূর্ভোগের চিন্তা করে আজাদের পরিবার হরতাল প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিহতের ছোট ভাই প্রকৌশলী এ.কে.এম জাহাঙ্গীর আজাদ এবং যুবলীগ, ছাত্রলীগের বরাত দিয়ে উপজেলা সদরে মাইকিং করে তা প্রচার করা হয়। ফলে বুধবার থেকেই শান্ত হয়ে আসে সরাইলের পরিবেশ। এদিকে নিহত নেতা ইকবাল আজাদের পরিবারের নিরাপত্তায় বাড়িতে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। টহলে আছে র্যাব, বিজিবি। বুধবার নতুন করে কোন ভাংচুর কিংবা অঙ্গিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। শহরের বেশিরভাগ দোকানপাট খোলা ছিল। যান চলাচল ছিল স্বাভাবিক। আজাদের হত্যাকারিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে সকালে মিছিল সমাবেশ করে ছাত্রলীগ। শহীদ মিনার থেকে বের হয়ে মিছিলটি শহর প্রদক্ষিণ শেষে শহীদ মিনারের পাদদেশেই সমাবেশ করে। উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বেলায়েত হোসেন মিল্লাত এর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শেরআলম, পায়েল হোসেন মৃধা, মো.আমিন প্রমুখ। মিছিলে ছাত্রলীগ ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নিয়ে এ হত্যাকান্ডের বিচার দাবি করেন। এর আগে সকাল ১০টার দিকে উপজেলার অরুয়াইল বাজারে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করে ইউনিয়ন যুবলীগ। মিছিলটি অরুয়াইল ও পাকশিমুল বাজারের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদিক্ষন করে আব্দুস সাত্তার ডিগ্রী কলেজ মাঠে প্রতিবাদ সভায় মিলিত হয়।
এদিকে সরাইল শান্ত হয়ে আসলেও আতংক এখনো কাটেনি। আবারও সহিংসতার আশংকায় এলাকায় আতংক বিরাজ করছে। নিরাপত্তাহীনতায় আতঙ্কে রয়েছেন এ.কে.এম ইকবাল আজাদের পরিবার, আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ নেতারা।
ইকবাল আজাদের ছোট ভাই ও হত্যা মামলার বাদী এ.কে.এম জাহাঙ্গির আজাদ বলেন, আমরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শংকিত। কারো নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, যারা আমার বাবাকে খুন করেছে তারা আমার ভাইয়ের খুনের সাথেও জড়িত। তারা যেকোন সময় আবারও অঘটন ঘটিয়ে ফেলতে পারে।
উপজেলার রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইকবাল আজাদ প্রায়ই তার সাথে কথা বলতেন জানিয়ে তিনি বলেন, আমার ভাই এখানে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। টি.আর. কাবিখা দিনে নেতাদের দূর্নীতি রোধে তিনি কঠোর ভূমিকা পালন করতেন। সেকারণেই তাকে প্রাণ দিতে হলো। খুনিরা এর আগেও একাধিকবার ফোনে তাকে হত্যার হুমকি দিয়েছিল। এখন আমার একটাই চাওয়া হত্যাকারিদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখমোখী করা।
সরাইল উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন মিল্লাত বলেন, হত্যাকান্ডের আগে একাধিকবার বিভিন্ন সভায় প্রকাশ্যে এ.কে.এম ইকবাল আজাদকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় আওয়ামীলীগ সভাপতি হালিমসহ অন্যরা। ঘটনার দিন সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল জব্বার এর কার্যালয়ে সকাল থেকেই দেশীয় অস্ত্র সস্ত্র জড়ো করা হচ্ছিল বলে খবর আসে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আমরা এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।
সদ্য বিলুপ্ত উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক আশরাফ উদ্দিন মস্তু বলেন, সদ্য বহিস্কৃত উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হালিম এবং সাধারণ সম্পাদক একাধিকবার প্রকাশ্যে এ.কে.এম ইকবাল আজাদ, আমিসহ কয়েকজন নেতাকে মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছিল। সারাদিন দেশীয় অস্ত্রের মহরা দিয়ে সন্ধ্যায় তাকে হত্য করা হয়। ওসিকে বার বার বিষয়টি অবহিত করা হলেও তিনি একজন পুলিশও পাঠাননি। এখনও খুনিরা গ্রেপ্তার না হওয়ায় আমরা নিরাপত্তা হিনতায় ভুগছি।
সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন বলেন, আসামীরা গা ঢাকা দিয়েছে। আমরা তাদেরকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চালাচ্ছি। নিহত আওয়ামীলীগ নেতার পরিবারের নিরাপত্তায় একজন এস.আইসহ ৬জন পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তাছাড়া সরাইলে অতিরিক্ত ৪০ জন পুলিশ আনা হয়েছে।
সরাইলে অবস্থান করা সহকারি পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) শাহআলম বাকাউল বলেন, মানুষের আবেগকে কাজে লাগিয়ে একটি পক্ষ ভাংচুর লুটপাট চালিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চায়। আমরা সে ব্যাপারে সজাগ আছি। পরিস্থিতি এখন স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গত, গত রবিবার সন্ধ্যায় দলীয় কোন্দলের জের ধরে আওয়ামীলীগ নেতা ইকবাল আজাদ খুন হন। দলীয় কোন্দলের জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটে। পরদিন উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি,সাধারণ সম্পাদকসহ ২২ জনকে আসামী করে মামলা করেন নিহতের ছোটভাই প্রকৌশলী এ.কে.এম জাহাঙ্গির আজাদ। জেলা আওয়ামীলীগ এক বিবৃতিতে এজাহারভুক্ত উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতাদের বহিস্কারসহ আওয়ামীলীগ ও যুবলীগের কর্মকান্ড স্থগিত করে ।
আরিফুল ইসলাম সুমন