আমাদের জীবনে কুরবানীর তাৎপর্য————–কাজী কোহিনূর বেগম তিথি

Sacrifice, as practised by Holy Prophet Muhammad (Pbuh) is an essential religious rite in memory of the sacrifice performed by Prophet Abraham. God put Abraham to a most difficult trial, the details of which are described in the Quran. ?O my Lord! Grant me (Abraham) a righteous (son)!? So We gave him the good news of a boy ready to suffer and forbear. ?Then, when the the son reached the age to work with him, he said: ?O my son I see in a vision that I offer you in sacrifice: Now say what is your view!? (The son) said: ?O My father! Do as you are commanded: You will find me if God so wills, one practising patience and constancy!? So when they had both submitted their wills (to God), and he had made him prostrate on his face (for sacrifice), We called out to him: ?O Abraham! You have already fulfilled the vision!? Thus indeed do we reward those who do right. ?For this was obviously a trial and We ransomed him with a momentous sacrifice: and We left (this blessing) for him among generations (to come) in later times: (37:100-109).
অর্থাৎ, ’কোরবানী ’অর্থ ত্যাগ।ইসলামে অনেক ধরনের কুরবানী বা ত্যাগের বিধান রয়েছে। এক ধরনের কোরবানী হল জানের কোরবানী । যেমন : নামাজ, রোযা, হজ্জ, জেহাদ ইত্যাদিও বিধান ।এগুলো লালন করতে গেলে কিছুটা জানকে কষ্ট দিতে হয়, দেহকে কষ্ট দিতে হয়। এমনকি জেহাদে গেলে নিজের পূর্ন জীবনটাও চলে যেতে পারে। আর এক ধরনের কোরবানী হল মালের কোরবানী ।যেমন-যাকাত, ফিতরা,কুরবানী দান সদ্কা ইত্যাদির বিধান ।এসব বিধান পালনের মাধ্যমে মালের কুরবানী দেয়া হয়।
হজ্জের মধ্যে জানের কুরবানীও হয়, মালের কুরবানীও হয়।আর একধরনের কুরবানী হল মনের কুরবানী অর্থাৎ, মনের চাহিদার কুরবানী, মনের খাহেশ এবং চাহাতের কুরবানী।এই কুরবানী ই হল সবচেয়ে বড় কুরবানী।কারনমানুষের পক্ষে জান মাল ব্যয় করা সহজ অর্থ্যাৎ, জান মালের কুরবানী দেয়া সহজ, কিন্তু মনের কুরবানী দেয়া কঠিন।মানুষ অকাতরে নিজের সম্পদ ব্যয় করতেও সহজে প্রস্তুত হয়ে যায়, কিন্তু নিজের মনের ধ্যান ধারনা, নিজের মনের বুঝ, নিজের মনের যুক্তি সহজে ছাড়তে প্রস্তুত হয় না। রাসূল (সা:) এর যুগে কাফেররা তাদের প্রচুর সম্পদ ব্যয় করেছে, এমনকি মুসলমানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে নিজেদের জীবন পর্যন্ত দিয়ে দিয়েছে, তবুও নিজেদের মনে কুফ্র শিরকের যে ধ্যান ধারনা ছিল সেটা ত্যাগ করতে রাজী হয়নি।অর্থাৎ, সবকিছু কুরবানী দিতে তারা রাজী হয়েছে, কিন্তু মনের কুরবানী দিতে তারা রাজী হয়নি।দেখা গেল মনের কুরবানীই হল সবচেয়ে কঠিন।

মনের কুরবানী হল সবচেয়ে বড় কুরবানী ।ঈদুল আযহার সময় যে কুরবানী, সেখানে জানোয়ার যবাইকরার মাধ্যমে মালেরও কুরবানী হয়, সেই সাথে মনেরও কুরবানী হয়।এই কুরবানীর জন্তু যবাই করতে বিপুল পরিমান অর্থ ব্যয় হবে, এই অর্থের প্রতি মনের যে মায়া, সেই মায়াকে ত্যাগ করেও কুরবানী করতে হবে। কুরবানী করতে গেলে মনের মধ্যে গোশ্ত খাওয়ার চাহিদাটাই মূল হয়ে দাঁড়াতে চাইবে, মনের এই চেতনাকেও কুরবানী দিতে হবে এবং সম্পূর্ন আল্লাহকে রাজী খুশি করার নিয়তেই কুরবানী করতে হবে।কুরবানীর জন্তু ক্রয় করার সময় মনের মধ্যে আসবে সবচেয়ে দামী জন্তুটা ক্রয় করব, কিংবা যেটা ক্রয় করব সেটাকে সাজিয়ে পরিয়ে মহড়া দিব, তাহলে মানুষ জানবে যে, অমুকে এই জন্তুটাা কুরবানী দিতে যাচ্ছে।এভাবে মনের মধ্যে নাম প্রচারের চেতনা এসে যেতে চাইবে।মনের এই চেতনাকেও কুরবানী দিতে হবে। এভাবে জন্তুও কুরবানীর সাথে সাথে মনেরও কুরবানী হবে।বরং মনের কুরবানীটাই হল আসল।কারন, মনের এই সব গলদ খেয়াল ত্যাগ না করলে এই জন্তু কুরবানীর আমলে এখ্লাস থাকবে না।আর কোন আমলে এখলাস না থাকলে সেই আমলের কোনই মূল্য নাই।তাই মনের কুরবানী না করে শুধু রক্ত মাংসের জানোয়ার কুরবানী করলে তাতে কোন ফয়দা হবে না।কুরআনে কারীমে আল্লাহ্ পাক তাই এরশাদ করেছেন :
”এই কুরবানীর জন্তুর রক্ত মাংস আদৌ আল্লাহর কাছে পৌছে না বরং আল্লাহর কাছে পৌছে তোমাদের তাকওয়া অর্থাৎ, তোমাদের মনের এখলাস ও আন্তরিকতা ”।(সূরা হজ্জ :৩৭)
এই কুরবানীর বিধান প্রবর্তিত হওয়ার যে মূল ইতিহাস অর্থ্যাৎ, হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর পুত্রকে কুরবানী করার ঘটনা, সেখানেও মূল ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর মনের কুরবানী ।তিনি আল্লাহর হুকুমে তাঁর কাছে দুনিয়ার মধ্যে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস পুত্রকে কুরবানী দেওয়ার জন্য মন থেকে পূর্ণ প্রস্তুতি গ্রহন করেছিলেন।এটাই ছিল তার মনের কুরবানী।নিজের সন্তানের চেয়ে প্রিয় জিনিস দুনিয়াতে আর কি হতে পারে ? সেই সন্তানকে কুরবানী দেয়ার জন্য আল্লাহ্ পাক হযরত ইব্রাহিম (আ:)কে হুকুম দিয়েছিলেন।তাও কেমন পুত্র ? প্রায় সারা জীবন হযরত ইব্রাহিম (আ:) ছিলেন নি:সন্তান।সন্তান লাভের আশায় তিনি বারবার আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন, নিজের বয়স হয়ে গিয়েছে ১২০ বছর, স্ত্রীর বয়স হয়েছে ৯৯ বছর। এ অবস্থায় আল্লাহ্ পাক তাঁকে একটা সন্তান দান করলেন, নাম ঈসমাইল।ইসমাঈলের বয়স যখন ৭ বছর বা এক বর্ননা মতে ১৩ বৎসর হল, তখন ইব্রাহিম (আ:) কে স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ্ পাক আদেশ দিলেন তোমার সবচেয়ে প্রিয় বস্তুকে কুরবানী করে দাও। (The history of Udhiyah/Qurbani is traced back to the dream of prophet Ibraham when he dreamt that Allah commanded him to sacrifice his only son, Prophet Ismail. He told his son the dream and Ismail entrusted himself to the Almighty and accepted to be sacrificed by his father. Due to their strong devotion and belief, Allah stopped Ibrahim from slaying his beloved son, and sent a ram to be slaughtered instead of Ismail. In short, It commemorates the willingness of Prophet Ibrahim to sacrifice his son for the Almighty.
Hence, this tradition still exist till today. On Eid Al-Adha, faithful, we submit to the will of Allah and sacrifice an animal for his sake.)

নবীদের স্বপ্ন হয় ওহী ।তাই নবীগন যা স্বপ্ন দেখেন তাতে কোন সন্দেহ থাকে না।নবীদের স্বপ্ন হল দলীল। তাই স্বপ্ন অনুযায়ী তিনি পুত্রকে কুরবানী করার জন্য প্রস্তুতি নিলেন। আমাদের স্বপ্ন দলিল নয়। তাই আমরা যদি এমন কোন স্বপ্ন দেখি যা শরীয়তে নেই, সেটা করা যাবে না।কেই যদি স্বপ্ন দেখে অমুক মাযারে শিরনী দাও বা নজর নেওয়াজ দাও বা গরু ছাগল দাও, বা অমুক পূজা মন্ডপে সাপকে দুধ কলাা দাও, তাহলে এসব স্বপ্ন অনুযায়ী আমল করা যাবে না। কারন মাযারে শিরণী বা নজর নেওয়াজ দেয়া জায়েজ নয়।এমনিভাবে পূঁজা মন্ডপে কিছু দেয়াও জায়েজ নয়। কাজেই এসব স্বপ্ন অনুসারে কাজ করা যাবে না।তবে শরীয়তে জায়েজ এমন কোন বিষয় যদি কেউ স্বপ্ন দেখে, তাহলে সে স্বপ্নের মূল্য আছে।
আমাদের স্বপ্ন দলীল নয়।কারন ঘুমের মধ্যে আমাদের চেতনা ঠিক থাকে না। কি দেখেছি তা হয়ত সঠিকভাবে মনে নেই বা সঠিক ভাবে তা বুঝতে পারিনি, কিংবা যা দেখেছি তা কি আল্লাহর পক্ষ থেকে দেখেছি না শয়তানের পক্ষ থেকে তারও গ্যারান্টি নেই।তাই আমাদেও স্বপ্ন দলিল হতে পারে না।
পক্ষান্তরে নবীগন ঘুমালেও তাদের চেতনা সজাগ থাকে।হাদীছে এসেছে নবীদের চোখ ঘুমায় কিন্তু তাঁদের অন্তর জাগ্রত থাকে।তাই তাঁরা স্বপ্নে কি দেখেছেন তা সঠিক ভাবে বুঝতেও পারেন< মনেও রাখতে পারেন।আর শয়তানের ওয়াছওয়াছা থেকেও আল্লাহ পাক তাদেরকে হেফাজতে রাখেন। তাই নবীগনের স্বপ্ন শরীয়তের দলীল হয়ে থাকে। হযরত ইব্রাহীম (আ:) তাই স্বপ্নের আদেশ অনুযায়ী পুত্রকে কুরবানী করার জন্য মিনার ময়দানে নিয়ে গেলেন। |{ It is necessary to say Bismillahi Allahu Akbar when slaughtering the animal. If one does not know how to slaughter the animal , it is preferred to be present while someone else is sacrificing it. It is not necessary to make the intention loudly (Niyyah).} কুরআন শরীফে এসেছে : ”হযরত ইব্রাহীম (আ:) পুত্রকে বললেন : হে আমার প্রিয় ছেলে ! আমি তোমাকে স্বপ্নে জবাই করার দেখেছি, তুমি ভেবে দেখ এখন কি করার। পুত্র জবাব দিল : হে পিতা ! আপনাকে যা আদেশ করা হচ্ছে তা-ই করুন, আপনি আমাকে ধর্য্যশীল পাবেন।(সুরা সাফ্ফাত :১০২) রেওয়ায়েতে এসেছে-পুত্র আরও বল্ল : হে আমার পিতা ! আমাকে শক্ত করে বাঁধবেন, যাতে আমি নড়াচড়া করতে না পারি। নড়াচড়া করলে আপনার জবাই করতে কষ্ট হবে, আপনার গায়ে রক্ত ছিটে গিয়ে লাগবে।আর ছুরিটাকেও ভালভাবে ধারাল করে নিন, যাতে তাড়াতাড় বাই সেরে ফেলতে পারেন। এভাবে হযরত ইব্রাহীম (আ:) পুত্রকে যবাই করার উদ্যোগ নিলেন। কুরআন শরীফে এসেছে : তারা পিতা পুত্র উভয়ে যখন আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করার জন্য নিজেদেরকে সোপর্দ করল, আর ইব্রাহিম পুত্রকে জবাই করার জন্য উপুড় করে শোয়াল, তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বল্লাম যে, হে ইব্রাহিম ! তোমার স্বপ্নকে তুমি বাস্তবে পরিনত করেছ।এটা ছিল এক মহা পরীক্ষা। (এই পরীক্ষায় তুমি উর্ত্তীর্ন হয়েছ।) আল্লাহ্ বলেন : এভাবেই আমি নেককার লোকদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। আল্লাহ পাক বলেন : আমি তার পুত্রের বদলে মর্যাদাবান দুম্বা পাঠিয়ে দিলাম।(জান্নাত থেকে এই দুম্বাটি আনা হয়েছিল।){সূরা সাফ্ফাত :১০৩-৭} হযরত ইব্রাহীম (আ:) পুত্রের গলায় ছুরি চালিয়ে ছিলেন, কিন্তু দেখা গেল পুত্র জবাই হল না, তার স্থলে ঐ দুম্বাটি জবাই হয়ে গেল। এ ঘটনায় দেখা গেল পুত্র জবাই না হওয়া সত্বেও আল্লাহ পাক বলেছেন, ইব্রাহিম (আ:) পরীক্ষায় পাশ করেছেন।বোঝা গেল পুত্রের কুরবানী হওয়াটাই পরীক্ষার মূল বিষয় ছিল না।বরং পরীক্ষার মূল বিষয় ছিল হযরত ইব্রাহিম(আ:) এর মনের কুরবানী। তিনি যখন মন থেকে পুত্রকে কুরবানী করার জন্য সম্পূর্ন ভাবে প্রস্তুত হলেন, আল্লাহ্র জন্য নিজের সবচেয়ে প্রিয় বস্তু পুত্রকে কুরবানী করতে উদ্যোগ নিলেন এবং প্রমান করলেন যে, আমি দুনিয়ার বস্তুর প্রতি আমার মনের সব ভালবাসা, মনের সব প্রেম আবেগ সব কিছুকে তোমার জন্য কুরবানী করে দিলাম, তখনই তিনি পরীক্ষায় পাশ হয়ে গেলেন।পুত্রের কুরবানী হয়ে যাওয়া আল্লাহর কাছে কাম্য ছিল না।যদি পুত্রের কুরবানী হয়ে যাওয়াই আল্লাহর কাছে কাম্য হত, তাহলে পুত্রই কুরবানী হয়ে যেত।বরং আল্লাহর কাছে কাম্য ছিল হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর মনের কুরবানী। হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর এই শিক্ষাকে ধরে রাখার জন্যই আমাদের উপরও কুরবানীর বিধান রাখা হয়েছে। হযরত যায়েদ ইব্নে আরকাম (রাযি:) বলেন: সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (স:) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন : অর্থ্যাৎ, ইয়া রাসুলাল্লাহ ! এই কুরবানী কি ? রাসুল (স:) জওয়াবে বললেন : এটা হল তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ:) এর মত মনের কুরবানী দিতে পারাই হল এই কুরবানীর শিক্ষা। অতএব আমরা যদি আল্লাহর হুকুম পালন করার জন্য আমাদের মনের সব রকম জযবাকে কুরবানী দিতে পারি যেমন-সম্পদের মায়াকে উপেক্ষা করে আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যায় করতে পারি, সম্পদ সঞ্চয় করে রাখার মোহকে কুরবানী দিয়ে যাকাত দিতে পারি, হজ্জ করতে পারি, মানুষের ভালবাসার উপর, ছেলে মেয়ে এবং পরিবারের ভালবাসার উপর আল্লাহ আল্লাহর রাসূলের ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে পারি ; এভাবে সব স্থানে মনের কুরবানীদিতে পারি, তাহলে বোঝা যাবে কুরবানীর শিক্ষা আমাদেও মধ্যে এসেছে।কুরবানীর জন্য উত্তম বস্তু ক্রয় করতে বলা হয়েছে।যাতে বেশী অর্থ ব্যয় হয় এবং মন থেকে অর্থেও মায়া-র কুরবানী হয়ে যায়। তাই কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম ।লেংড়া, পা ভাঙ্গা, কান কাটা লেজ কাটা, শিং ভাঙ্গা ও অন্ধ দ্বারা কুরবানী জায়েজ নয়। কুরবানী করতে হবে একমাত্র আল্লাহর হুকুম পালন ও ছওয়াব অর্জন করার নিয়তে । নাম শোহরতের ও মানুষকে দেখানোর নিয়ত ও থাকতে পারবে না। এই নাম শোহরতের জয্বাকেও কুরবানী দিতে হবে। এমন কি গোশত খাওয়ার উদ্দেশ্যেকুরবানী করলেও কুরবানী সহীহ হবে না।এমন কি কয়েকজন শরীকে মিলে যদি একটা পশু কুরবানী করে, আর তাদের মধ্যে একজনের নিয়তও গলদ থাকে, তাহলে সেই শরকিদেও অন্য কারও কুরবানী সহীহ্ হবে না।তাই শরীক নেওয়ার ক্ষেত্রে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।কারও সম্পর্কে যদি কোনভাবে বোঝা যায় যে, তার নিয়ত সহীহ নয়, তাহলে তার সঙ্গে মিলে কুরবানী না করা চাই।এ বিষয়টি অত্যন্ত নাজুক।শরীকদের প্রত্যেকের নিয়ত সহীহ থাকতে হবে।অন্যথায় সকল শরীকের কুরবানী নষ্ট হয়ে যাবে, কুরবানীর ছওয়াব পাওয়া যাবে না।সামান্য একটু গলদ নিয়তের কারনে কুরবানীর এত বড় সওয়াব নষ্ট করা হবে চরম বোকামী। কুরবানীর কত ছওয়াব –এ সস্পর্কে হাদীছে এসেছে। পূর্বে উল্লেখিত হযরত যায়েদ ইবনে আরকাম (রাযি:) থেকে বর্নিত হাদীছে এসেছে : সাহাবায়ে কেরাম রাসূল (সা:) কে জিজ্ঞাসা করলেন ইয়া রাসূলাল্লাহ !কুরবানী করলে আমরা কি পাব ? রাসূল (সা:) বল্লেন : প্রত্যেকটা চুলের বদলে এক একটা নেকী পাব। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞাসা করলেন পশমের বদলেও কি ছওয়াব পাওয়া যাবে ? রাসূল (সা:) বল্লেন : প্রত্যেকটা পশমের বদলে এক একটা ছওয়াব পাওয়া যাবে।সুবহানাল্লাহ ! তাহলে একটা কুরবানীর কত ছওয়াব ! একটা পশুর গায়ে কত লক্ষ লক্ষ পশম থাকে তা কে গননা করে দেখেছে ! কুরবানীর এই সোয়াবের দিকে তাকালে যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়, তাদেরও কুরবানী অর্থ্যাৎ, নফল কুরবানী করতে জয্বা হওয়ার কথা। আর যাদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব, তাদেরতো অবশ্যই কুরবানী করতে হবে। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার জন্য অনেক টাকা পয়সা থাকা জরূরী নয়।ঈদুল আজহার দিনগুলোতে যার কাছে যাকাত ওয়াজিব হওয়া পরিমান অর্থ / সম্পদ থাকে, তার উপরই কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়। এ হিসেবে কারো কাছে সাড়ে বায়্ন্ন তোলা রূপার মূল্য পরিমান টাকা পয়সা থাকলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়ে যায়।আমাদের অনেক মা বোনের কাছে এ পরিমান অনেক অর্থ সম্পদ থাকে।অথচ আমরাা মনে করি না যে, আমাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব হয়েছে।আমরা মনে করি শুধু পুরুষদের উপরই কুরবানীর বিধান।তা নয়। নারীদের উপরোক্ত পরিমান সম্পদ থাকলে তাদের উপরেও কুরবানী ওয়াজিব।র্কা কাছে কি পরিমান টাকা-পয়সা বা সোনা রূপা আছে, বা কি পরিমান ব্যবসার মালামাল আছে, সেগুলো হিসেব করে প্রয়োজন হলে উলামায়ে কেরাম থেকে জেনে নিতে হবে। কুরবানী ওয়াজিব হয়ে থাকলে টাকা-পয়সার মায়াকে কুরবানী দিয়ে কুরবানী করতে হবে।সম্ভব হলে ওয়াজিবের বাইরেও নফল কুরবানী করার নিয়ম রয়েছে। মৃত মাতা-পিতার নামে , আপনজনের নামে, রাসূল (সা:) এর নামে, তাঁর বিবিদের নামে আমরা নফল কুরবানী করতে পারি। দিল খুলে আমাদেরকে কুরবানী করতে হবে।এভাবে প্রচুর সংখ্যক কুরবানী হতে পারে। ইসলামের জন্য যাদের দরদ নেই বা যারা ইসলামকে মনেপ্রানে পছন্দ করে না, তারা কুরবানীর দিনে এত সংখ্যক পশু কুরবানী হতে দেখে ভেতরে ভিতরে জ্বলতে থাকে এবং কুরবানী যেন কম হয় –এজন্য তারা নানান যুক্তি পেশ করতে থাকে।কেউ কেউ বলে : এই এক সময় যদি এত জানোয়ার জবাই না করা হত এবং সারা বছর আস্তে আস্তে যবাই হত, তাহলে সারা বছর বহু মানুষের পুষ্টির ব্যবস্থা হত।এই এক সময় এত পশু যবাই হওয়ায় সারা বছর পশুর ঘাটতি দেখা দিয়ে থাকে ইত্যাদি।তাদের এই যুক্তি ভুল।বেশী ব্যবহার করলেই ঘাটতি দেখা দিবে এটা বা¯তবতা বিরোধী কথা। বরং বাস্তব হল-যে জিনিসের ব্যবহার যত বেশী হয়, তার উৎপাদনও তত বাড়তে থাকে।আর যার ব্যবহার যত কম, তার উৎপাদনও তত কম । এ কারনেই দেখা যায় কুকুর বিড়াল ইত্যাদি জানোয়ারের সংখ্যা কম। কোন মুসলমান এগুলো খায় না।তাই এদের সংখ্যাও তেমন বাড়ে না।অথচ বিড়াল, কুকুর এক সাথে অনেকগুলো করে বাচ্চা দেয়।তবুও তাতে বরকত নেই।এর বিপরীত গরুছাগল প্রতিদিন অনেক সংখ্যায় জবাই হয়, তবুও তার সংখ্যা দিন দিন বাড়তেই থাকে।আল্লাহ পাকই বরকত দিয়ে খাকেন।তাছাড়া যে জিনিসের ব্যবহার যত বেশী হয়, মানুষও সেটা বেশী হারে উৎপাদনের দিকে মনোযোগ দিয়ে থাকে।কাজেই এসমস্ত অপপ্রচারে প্রভাবিত না হওয়া উচিৎ।এগুলো ইসলামের বিরূদ্ধে অপপ্রচার। এরকম অপপ্রচারে কান না দেয়া উচিৎ। দেল খুলে খুশি মনে কুরবানী করা উচিৎ। কুরবানীর ব্যাপারে রাসূল (সা:) বলেছেন : অর্থ্যাৎ তোমরা খুশি মনে দেল খুলে কুরবানী করে দাও। আল্লাহ পাক আমাদের মনের সব রকম ওয়াছাওয়াছা দূর করে দেন।দিল খুলে কুরবানী করার তওফীক দান করুন । নিন্মে কুরবানী সম্পর্কে জরূরী কিছু কথা বর্ননা করা হল : *১০ ই জিল হজ্জের ফজর থেকে ১২ই জিলহজ্জের সন্ধা পর্যন্ত অর্থ্যাৎ, কুরবানীর দিনগুলোতে যার নিকট সদকায়ে ফিতর / ফিতরা ওয়াজিব হওয়া পরিমান অর্থ / সম্পদ থাকে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। *মুসাফিরের উপর (মুসাফিরী হালতে) কুরবানী করা ওয়াজিব নয়। *কুরবানী ওয়াজিব না হলেও নফল কুরবানী করলে কুরবানী করলে কুরবানীর ছওয়াব পাওয়া যাবে। *কুরবানী শুধু নিজের পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয়- সন্তানাদি, মাতা-পিতা ও স্বামীর পক্ষ থেকে ওয়াজিব হয় না, তবে তাদের পক্ষ থেকে করলে তা নফল কুরবানী হবে। * যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় সে কুরবানীর নিয়তে পশু ক্রয় করলে সেই পশু কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব হয়ে যায়। *কোন মাকসুদের জন্য কুরবানীর মান্নত করলে সেই মাকসুদ পূর্ন হলে তার উপর (গরীব হোক বা ধনী) কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যয়ি। *যার উপর কুরবানী ওয়াজিব, সে কুরবানী না করলে কুরবানীর দিনগুলো চলে যাওয়ার পর একটা বকরীর মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। *বকরী,পাঠা, খাশী, ভেড়া, ভেড়ী,দুম্বা, গাভী, ষাড়, বলদ,মহিষ,উট এই কয় প্রকার গৃহপালিত জন্তু দ্বারা কুরানী করা দুর¯ত। *বকরী, খাশী, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা কমপক্ষে পূর্ন এক বছর বয়সের হতে হবে।বয়স যদি এক বছর থেকে কিছু কমও হয়, কিন্তু এরুপ মোটাতাজা যে, এক বছর বয়সীদের মধ্যে ছেড়ে দিলেও তাদের চেয়ে ছোট মনে হয় না, তাহলে তার কুরবানী দুরস্ত আছে, তবে অন্তত :মাস বয়স হতে হবে। বকরীর ক্ষেত্রে এরূপ ব্যতিক্রম নেই। বকরী কোন অবস্থায় এক বৎসরের কম বয়সের হতে পারবে না। *গরু ও মহিষের বয়স কম পক্ষে দুই বৎসর হতে হবে। *উট এর বয়স কম পক্ষ পাঁচ বৎসর হতে হবে। *কুরবানীর পশু ভাল এবং হৃষ্ট পৃষ্ট হওয়া উত্তম। *যে প্রানী লেংড়া অর্থ্যাৎ, যা তিন পায়ে চলতে পারে- এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা রাখতে পারলেও তার উপর ভর করতে পারে না-এসব পশু দ্বারা কুরবানী যায়েজ নয়। * যে পশুর একটিও দাঁত নেই তা দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। *যে পশুর কান জন্ম থেকেই নেই, তা দ্বারা কুরবানী দুরস্থ নয়।তবে কান ছোট হলে অসুবিধা নেই। * যে পশুর শিং মূল থেকে ভেঙ্গে যায় তা দ্বারা কুরবানী দুরস্থ নয়।তবে শিং ওঠে নাই বা কিছু পরিমান ভেঙ্গে গিয়েছে এরূপ পশুর কুরবানী দুরস্ত আছে। *যে পশুর উভয় চোখ অন্ধ বা একটি চোখ পূর্ন অন্ধ বা একাট চোখের দৃষ্টি শক্তি এক তৃতীয়াংশ বা তার বেশী নষ্ট, তা দ্বারা কুরবানী দূরস্থ নয়। *যে পশুর একটি কান বা লেজের এক তৃতীয়াংশ কিংবা তার চেয়ে বেশী কেটে গিয়েছে তা দ্বারা কুরবানী দুরস্থ নয়। *অতিশয় কৃশকায় ও দুর্বল পশু যার এতটুকু শক্তি নেই য়ে, জবেহের স্থান পর্যন্ত হেটে যেতে পারে, তা দ্বারা কুরবানী দুরস্থ নয়। *ভাল পশু ক্রয় করার পর এমন দোষত্র“টি দেখা দিয়েছে যার কারনে কুরবানী দুরস্থ হয় না, এরূপ হলে ঐ জন্তুটি রেখে আর একটি ক্রয় করে কুরবানী করতে হবে।তবে ক্রেতা গরীব হলে সেটিই কুরবানী দিতে পারবে। *গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয।যদি পেটের বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তবে সে বাচ্চাও জবেহ করে দিতে হবে।তবে প্রসবের নিকটবর্তী হলে সেরূপ গর্ভবতী পশু কুরবানী দেওআ মাকরূহ। *বন্ধা পশু কুরবানী করা জায়েয। *বকরী, খাশী,পাঠা, ভেড়া-ভেড়ী ও দুম্বায় এক জনের বেশী শরীক হয়ে কুরবানী করা যায় না।এগুলোা একটা একজনের একজনের পক্ষ থেকেই কুরবানী হতে পারে। *একটা গরু, মহিষ ও উটে সর্বোচ্চ সাতজন শরীক হতে পারে।সাতজন হওয়া জরূরী নয়-দুইজন বা তিনজন বা চারজন বা পাঁচজন বা ছয়জন কুরবানী দিতে পারে, তবে কারও অংশ সাত ভাগের এক ভাগের চেয়ে কম হতে পাবে না। *মৃতের নামেও কুরবানী হতে পারে। *রাসূলুল্লাহ্ (সা:), তাঁর বিবিগন ও বুযুর্গদের নামেও কুরবানী হতে পারে। *যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তরে আল্লার্হ উদ্দেশ্যেকুরবানী করে না বরং গোশত খাওয়া বা লোক দেখানো ইত্যাদি নিয়তে কুরবানী করে, তাকে অংশীদার বানিয়ে কোন পশু কুরবানী করলে সকল অংশীদারের কুরবানী-ই নষ্ট হয়ে যায়। *কুরবানীর পশু ক্রয় করার সময় শরীক রাখার ইরাদা ছিল না, পরে শরীক গ্রহন করতে চাইলেক্রেতা গরীব হইলে তা পারবে না, অন্যথায় পারবে। *যার সমস্ত উপার্জন বা অধিকাংশ উপার্জন হারাম, তাকে শরীক করে কুরবানী করলে অন্যান্য সকল শরীকের কুরবানী অশুদ্ধ হয়ে যাবে। গোশ্ত বন্টনের নিয়ম : *অংশীদারগন সকলে একান্নভুক্ত হলে গোশত বন্টনের প্রয়োজন নেই।অন্যথায় বন্টন করতে হবে। *অংশীদারগন গোশত অনুমান করে বন্টন করবেন না বরং বাটখারা দিয়ে ওজন করে বন্টন করতে হবে। অন্যথায় ভাগের মধ্যে কমবেশ হয়ে গেলে গোনাহগার হতে হবে।অবশ্য কোন অংশীদার মাথা, পায়া ইত্যাদি বিশেষ কোন অংশ গ্রহন করলে তার আগে গোশত কিছু কম হলেও তা দুরস্ত হবে। কিন্তু যেভাগে গোশত বেশী , সেভাগে মাথা পায়া ইত্যাদি বিশেষ অংশ দেয়া যাবে না। সেভাগে মাথা পায়া ইত্যাদি বিশেষ অংশ দেয়া যাবে না। *অংশীদারগন সকলে যদি সম্পূর্ন গোশত দান করে দিতে চায় বা সর্ম্পূটা রান্না করে বিলাতে বা খাওয়াতে চায় চায়, তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নেই। কুরবানীর গোশ্ত খাওয়া ও দান করার নিয়ম : *কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়া, পরিবারবর্গকে খাওয়ানোও, আত্মীয় –স্বজনকে দেয়া এবং গরীব মিসকীনকে দান করা। *মান্নতের কুরবানীর গোশত হলে নিজে খেতে পারবে না এবং মালদারকেও দিতে পারবে না বরং পুরোটাই গরীব মিসকীনদেরকে দান করে দেয়া ওয়াজিব। *যদি কোন মৃত ব্যক্তি মৃত্যুর পূর্বে কুরবানীর জন্য অসিয়ত করে গিয়ে থাকেন, তবে সেই কুরবানীর গোশ্তও মান্নতের কুরবানীর গোশতের ন্যায় পুরোটাই খয়রাত করা ওয়াজিব। *কুরবানীর গোশ্ত বা বিশেষ কোন অংশ (যেমন মাথা) পারিশ্রমিক রূপে দেয়া জায়েয নয়। যেমন অনেক এলাকায় নিয়ম আছে যবেহকারীকে যবেহের পারিশ্রমিক বাবদ মাথা দিয়ে দেয়া হয়, এটা জায়েয নয়। *কুরবানীর গোশ্ত শুকিয়ে (বা ফ্রীজে রেখে) দীর্ঘ দিন খাওয়াতে কোন অসুবিধা নেই। Mufti Muhammad Taqi Uthmaani states that the philosophy behind ‘Udhiya’ is that it is a demonstration of total submission to Allah and a proof of complete obedience to Allah’s will or command. When a Muslim offers a ‘Udhiya’ this is exactly what he intends to prove. Thus, the ‘Udhiya’ offered signifies that he is a slave of Allah at his best. And that he would not hesitate even for a moment once he receives an absolute command from his Creator to surrender before it, to obey it willingly, even if it be at the price of his life and possessions.

Check Also

করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত

বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...

Leave a Reply