ভারতকে ট্রানজিট সুবিধা দিতে ২৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীন কন্টেইনার নৌবন্দর স্থাপন প্রক্রিয়া শুরু

ব্রাহ্মণবাড়িয়া / ৩ অক্টোবর (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)———-

ভারতকে ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিতে আওয়ামী লীগ সরকার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে অভ্যন্তরীন কন্টেইনার নৌবন্দর স্থাপন করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এর জন্য প্রায় ২৪৫ কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিস্ট সূত্র জানায়, গত ৪ জানুয়ারীর মন্ত্রী পরিষদ (একনেক) বৈঠকে এই প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। অর্থ ছাড় পেলেই দ্রুত এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। অগ্রাধিকার ভিত্তিক এই প্রকল্পটি আগামী ২০১৩ সালের জুন মাসের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে।
এদিকে ২৪৫ কোটি টাকার এই প্রকল্প সরজমিনে দেখতে বাংলাদেশ ও ভারতের ১০ সদস্যের একটি যৌথ প্রতিনিধি দল গত ৩০ সেপ্টেম্বর আশুগঞ্জ নৌবন্দর পরিদর্শন করেন। তারা আশুগঞ্জ নৌবন্দরে এসে বিআইডাব্লিওটিএ’র ‘আজরা’ নামক একটি জাহাজে করে মেঘনা নদীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখেন। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন বিআইডাব্লিওটিএ‘র পরিচালক (পরিকল্পনা) মাহমুদ হাসান সেলিম এবং ভারতীয় প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন আইডাব্লিওএআই‘র পরিচালক মানষ কুমার। এসময় ভারতীয় দূতাবাসের রেলওয়ে উপদেষ্টা শ্রীমতি চন্দ্রিমা রায়, ভারতের পোর্ট এন্ড ওয়াটার রিসোর্সের অতিরিক্ত মহাব্যবস্থাপক ড. কে জি এস শর্মা, ট্রান্সপোর্ট ইকোনোমিষ্ট সম্রাট দাস গুপ্ত, টাটা কোম্পানীর পের্ট এন্ড ট্রান্সপোর্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক দেবাট্টা বোস, বিআইডাব্লিওটিএ নৌসংরক্ষণ ও পরিচালনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক মোহাম্মদ হোসেন, বিআইডাব্লিওটিএ‘র উপ-পরিচালক আলফাজ উদ্দিন, নৌবন্দরের প্রকল্প পরিচালক মহিদুল ইসলাম ও পরিবহন পরিদর্শক মোঃ শাহ আলম উপস্থিত ছিলেন। পরে যৌথ প্রতিনিধি দলটি আশুগঞ্জ নৌবন্দরের ফেরীঘাট এলাকায় বর্তমান স্থাপনা জেটিঘাট ও কন্টেইনার ইয়ার্ডের জন্য প্রস্তাবিত স্থান সাইলো জেটিঘাট এলাকা পরিদর্শন করেন। আশুগঞ্জ নৌবন্দর কর্তৃপক্ষ জানান, বর্তমানে বন্দরের ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে আরো ২টি জেটি নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নদী পথের নাব্যতা সমস্যাও সমাধানের জন্য নদী খননের পরিকল্পনা গ্রহন করেছে বিআইডাব্লিওটিএ। ইতিমধ্যে একটি জেটিঘাট স্থাপন ও প্রশাসনিক ভবন নির্মানের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে।
এদিকে ভারতীয় ৩ হাজার ২২৫ টন পন্য নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ আর্ন্তজাতিক নৌবন্দরে নোঙর করা ৩টি জাহাজ থেকে কাষ্টমসের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে পন্য ট্রান্সশিপমেন্ট কার্যক্রম শুরু করেছে। ভারতীয় পন্য নিয়ে আসা জাহাজ গালফ-৩ ও গালফ-৫ থেকে ১১শ’টন কয়লা লাইটার জাহাজ এমভি সাহাবি ও এমভি যেবু-৮ লোড করে গত সোমবার ভোরে এবং যেবু-৭এ ৩৩৬ টন কয়লা লোড করে গতকাল বুধবার সকালে ভারতের আসাম রাজ্যের করিমগঞ্জ নৌবন্দরের উদ্দ্যেশে ছেড়ে গেছে। জানা গেছে, গালফ-৩ ও গালফ-৫ জাহাজে মোট ২ হাজার ২২৫ টন কয়লা রয়েছে। এছাড়া সিমেন্ট তৈরির ক্যামিকেল নিয়ে আসা বিবি-১১৩৫ থেকে এমভি মিতালী ও এমভি পূবালী নামে লাইটার ২টি জাহাজে পন্য ট্রান্সশিপমেন্ট করা হচ্ছে। আর এসব পন্য পরিবহন করছে বাংলাদেশের গালফ ওরিয়েন্ট সিওয়েজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান। আগামী ২০/২৫ দিনের মধ্যে লাইটার জাহাজে এসব পন্য ট্রান্সশিপমেন্ট করে সিলেটের জকিগঞ্জ দিয়ে করিমগঞ্জ নৌবন্দরের মাধ্যমে ভারতের আসাম রাজ্যের নিয়ে যাওয়া হবে।
উল্লেখ্য যে, গত ২১ সেপ্টেম্বর ভারতীয় পন্য বোঝাই জাহাজ ৩টি আশুগঞ্জ বন্দরে এসে পৌঁছে। পরে জাহাজ ৩টি আশুগঞ্জ লঞ্চ টার্মিনালের পশ্চিমে মেঘনা নদীতে নোঙর করে রাখা হয়। কলকাতা ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে গত ৩ সেপ্টেম্বর এক হাজার টন সিমেন্ট তৈরির কেমিক্যাল নিয়ে বিবি-১১৩৫ এবং গত ৪ সেপ্টেম্বর ভোরে গালফ-৫ এক হাজার টন ও গালফ-৩ এক হাজার ২শত ২৫ টন কয়লা নিয়ে ছেড়ে আসে। খুলনার শেখবাড়িয়া দিয়ে ভারতীয় পন্যবাহি এই জাহাজ ৩টি বাংলাদেশ জল সীমানায় প্রবেশ করে। চলতি বছর নৌপ্রটোকল চুক্তি নবায়নের পর এই প্রথম ভারতীয় পন্যবাহি কোন জাহাজ বাংলাদেশের জল সীমানা ব্যবহার করেছে এবং বাংলাদেশের জল সীমানা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন রকম শুল্ক বা ফি নেয়া হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে পরিবহন ঠিকাদারী প্রতিষ্টান গালফ ওরিয়েন্ট সিওয়েজ এর লজিষ্টিক ম্যানেজার মোঃ নুরুজ্জামান জানান, কলকাতা ক্ষিদিরপুর নৌবন্দর থেকে ৩টি জাহাজে কয়লা ও সিমেন্ট তৈরির পাওডার আনা হয়েছে। নদীর নব্যতা সংকটের কারণে আশুগঞ্জ নৌবন্দরে জাহাজ নোঙর করে এসব পন্য বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে ট্রান্সশিপমেন্ট করে পূনরায় আসাম রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বিআইডব্লিওটিএ আশুগঞ্জ নৌবন্দরের পরিবহন পরিদর্শক মো. শাহ আলম জানান, জাহাজ ৩টি বাংলাদেশর জল সীমানা ব্যবহার করা এবং ভারতীয় পন্য পরিবহনের অনুমতি আছে কিনা কাগজপত্র যাচাই করে সঠিক পাওয়া গেছে। ৩টি জাহাজ থেকে ছোট ছোট ৫টি জাহাজে বর্তমানে পন্য ট্রান্সশিপমেন্ট চলছে। লাইটার ৩টি জাহাজ এমভি যেবু-৭, এমভি সাহাবি ও যেবু-৮ সিল করে দেয়া হয়েছে। গত সোমবার ভোরে এবং বুধবার সকালে এই জাহাজ ৩টি আশুগঞ্জ নৌবন্দর ছেড়ে গেছে। আশুগঞ্জ নৌবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মোঃ ইমাম হোসেন জানান, জাহাজ ৩টির কাগজপত্র যাচাই করে সঠিক পাওয়ার পর ট্রান্সশিপমেন্ট করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। এসব পন্য ট্রান্সশিপমেন্ট করে সিলেটের জকিগঞ্জ হয়ে করিমগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ভারতের আসাম রাজ্যে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তবে নবায়নকৃত নৌপ্রটোকল চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের জল সীমানা ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোন রকম শুল্ক বা ফি নেয়া হচ্ছে না।

আরিফুল ইসলাম সুমন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া

Check Also

করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত

বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...

Leave a Reply