দেবিদ্বার/ সেপ্টেম্বর-১৯(কুমিল্লাওয়েব ডটকম)—-
দেবিদ্বারে এম.ডি.আর (মাল্টি ড্রাগস রেজিষ্ট্রেন্ট) আক্রান্ত ভয়াবহ যক্ষা-জীবাণুবাহী রোগী নাছিমা আক্তার প্রচলিত সরকারী চিকিৎসা সেবা না নিয়ে গত ৯ মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তাকে খুঁজে এনে উন্নত চিকিৎসা প্রদানে সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার দুপুরে যক্ষা নিয়ন্ত্রনে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও ব্র্যাকের উদ্যোগে উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্স মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচির আওতায় নারী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন সভায় আলোচকরা ওই অভিযোগ করেন।
এম.ডি.আর যক্ষা-জীবাণুবাহী ওই রুগীটি গত ১৫মাস ধরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত বছরের জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত তিন জন এম.ডি.আর’র রুগী চিহ্নীত হলে তাদের জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালের নিয়ন্ত্রনে চিকিৎসা সেবা দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়। ইতিমধ্যে ধামতী গ্রামের লিপি আক্তার(২৫) সম্পূর্ণ সুস্থ্য হয়ে উঠেছেন। ওয়াহেদপুর গ্রামের নজরুল ইসলাম (৩৫) আর তিন মাস পরেই সুস্থ্য হয়ে উঠবেন। বিনাইপাড় গ্রামের আবুল কাসেম খানের কন্যা নাছিমা আক্তার (২২) প্রচলিত সরকারী চিকিৎসা সেবা না নিয়ে গত বছরের আগষ্ট মাসে ঢাকা বক্ষ্যব্যধী হাসপাতাল থেকে চিকিৎসারত অবস্থায় পালিয়ে এসে আত্মগোপনে আছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
আলোচকরা এম.ডি.আর’র আওতায় যক্ষা রুগীদের এইডস্ এর ভয়াবহতার সাথে তুলনা করে এ রোগের জীবানুর ভয়াবহ অবস্থা তুলে ধরে আরো বলেন, তাদের শ্মাস নালী থেকে নির্গমনকৃত বাতাস প্রতি সেকেন্ডে বায়ুমন্ডলে নিস্মৃত হয়ে লক্ষ লক্ষ জীবানু সুস্থ্য দেহে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারন একজন যক্ষার জীবানুবাহী রুগীর একটি কাসি ৫বর্গমাইল জীবানু ছড়াতে সক্ষম। যার (এম.ডি.আর) চিকিৎসা প্রচলিত যক্ষা প্রতিরোধে নিয়োজীত ৪টি ঔষধে সুস্থ্য করা সম্ভব নয়। তাদের সম্পূর্ণ গণবিচ্ছিন্ন অবস্থায় জাতীয় বক্ষব্যধী হাসপাতালের নির্দিষ্ট কক্ষে থেকে ৬ থেকে ১৮ মাস চিকিৎসা সেবা নিতে হয়। সুস্থ্য হয়ে তারা আবার লোকালয়ে ফিরে আসেন। চিকিৎসার আওতার বাহিরে থাকা রুগীরা যেমন নিশ্চিত মৃত্যুর দিকে ধাবিত হয়, তেমনি সুস্থ্য দেহে ওই (এম.ডি.আর রুগী যা সাধারণ যক্ষা আক্রান্ত রুগীদের থেকে অত্যন্ত ভয়াবহ ও জীবন ঝুকিপূর্ণ চিকিৎসা ত্রুটিতে এইডস্ রুগীদের মতো পরিনতি নিশ্চিত মৃত্যু) জীবানু আক্রান্তদের একই পরিনতি হয়। আলোচকরা আরো বলেন, পালিয়ে বেড়ানো ওই রুগীটি স্থানীয় একটি প্রাইভেট ক্লিনিক ‘নিরাময় ক্লিনিক’র স্বত্বাধিকার ডাঃ হুমায়ুন কবির’র চিকিৎসা সেবা নেয়ার সংবাদে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ব্র্যাকের কর্মকর্তারা ওই ডাক্তারের কাছে সহায়তা চেয়েও সহায়তা পাননি।
তাছাড়া উপজেলা ব্র্যাক ব্যবস্থাপক মোঃ মাইদুল ইসলাম বলেন, নাছিমাকে উন্নত চিকিৎসায় স্থানীদের সহযোগীতা এমনকি ডাঃ হুমায়ুন কবির’র সহযোগীতাও পাওয়া যায়নি। তিনি বলেন, গত ৮মাসে যক্ষার জীবানু পরীক্ষায় ২,৭২৫জন রুগীর কফ পরীক্ষায় ৩৬২জন আক্রান্ত রুগী চিহ্নীত হলেও এদের মধ্যে ৩৪৯রুগী আরোগ্য লাভ করেছে, বর্তমানে ৫জন চিকিৎসাধীন রয়েছে। এদের মধ্যে ৮জনের মৃত্যু হয়েছে। তিনি আরো বলেন, দেবিদ্বারে যক্ষা নিয়ন্ত্রনে ৯৮% সফলতা লাভ করলেও উপস্থিত সকল পেশার লোকদের এ ভয়াবহ রোগ মুক্তিতে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ বেলায়েত হোসেন’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ‘জাতীয় যক্ষা নিয়ন্ত্রন কর্মসূচির আওতায় নারী সংগঠনের সদস্যদের নিয়ে ওরিয়েন্টেশন সভায় অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মোঃ কবির আহমেদ, দেবিদ্বার ব্র্যাক ব্যবস্থাপক মোঃ মাইদুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার ফজলুর রহমান, উপজেলা কুষ্ট ও যক্ষা নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তা আব্দুল কাদের খান প্রমূখ।
ওই ঘটনায় ডাঃ হুমায়ুনের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। বিনাইপাড় গ্রামের প্রতিবেশী আলী হোসেন জানান, নাছিমা মৃত্যু ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তিনি আরো জানান, নাছিমার ধারনা তাকে জাতীয় বক্ষব্যাধী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ার নামে ওখানে নিয়ে গুলি করে হত্যাপূর্বক পুড়িয়ে ফেলা হবে। কারন এ জাতীয় রুগীরা ভালো হয়না, তাদের জীবানু ভালো মানুষের ক্ষতি করতে পারে, যে রোগ এইডস’র মতো ভয়াবহ। সে বলে এমনিতেই ভালো আছি। কেউ হয়তো তাকে ভুল বুঝিয়ে মানষিক বিপর্যয় ঘটিয়েছে। মিথ্যে মৃত্যু আতঙ্কে তাড়া করছে, বেঁচে থাকার আশায়ই হয়তো সে এ ভুল পথে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
দেবিদ্বার উপজেলা ডটস কমিটির উপদেষ্টা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ হারুন-অর-রশীদ বলেন, দু/একদিনের মধ্যে নাছিমার অবস্থান নিশ্চিত করে তাকে বুঝিয়ে এনে উপযুক্ত চিকিৎসা সেবাদানের ব্যবস্থা করা হবে।
Check Also
দাউদকান্দিতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু
হোসাইন মোহাম্মদ দিদার :কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শান্তা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ...