ব্রাহ্মণবাড়িয়া/ সেপ্টেম্বর ১২ (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)—–
হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীর মাহমুদ তফসির ছোট বেলা থেকেই আলিশান গাড়ি ও বাড়ির মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। যদিও তার পিতা মো. নূরুল ইসলাম কালু মিয়া গ্রামে ফেরি করে অ্যালুমোনিয়ামের হাড়ি-পাতিলের ব্যবসা করতেন। পিতার সাথে তানভীর মাহমুদও এ ব্যবসা করতেন। ২০০০ সালে তিনি ঢাকায় যান। মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনের চাকুরী থেকে তানভীর রাতারাতি শিল্পপতি বনে যান। হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে সিআইপি কার্ডও পান তিনি। তার স্ত্রী ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের পরিচয় ঘটে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গে। এই পরিচয় সূত্র ধরে সরকারের ঘনিষ্ঠ অনেকের সাথে সখ্যতা গড়ে উঠে তানভীর মাহমুদ ও তার স্ত্রী জেসমিন ইসলামের। বিপুল অর্থ উপহার দিয়ে সরকারের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের প্রভাব খাটিয়ে তারা ব্যাংকের সকল নিয়ম-কানুন ভঙ্গ করে ঋণ নেয় হাজার হাজার কোটি টাকা। এছাড়া হলমার্ক দামি গাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন মূল্যবান সামগ্রী উপহার দিয়ে প্রভাবশালীদের ছত্রচ্ছায় সাভার এলাকার নিরীহ মানুষের জমি দখল করে নিয়েছে। ভূয়া কাগজপত্র তৈরী করে জমির মূল্য বহুগুণ বাড়তি দেখিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় ব্যাংক থেকে কোটি কোটি টাকা ঋণ নেয়। সূত্র জানায়, নিরীহ মানুষের জায়গা দখলের অভিযোগে হলমার্ক তানভীর মাহমুদসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সাভার থানায় ১৩টি মামলা ও ২৭টি জিডি রয়েছে। এছাড়া প্রভাবশালীদের হুকুমে পুলিশ আমলে নেয়নি আরো শতাধিক অভিযোগ। অতি-সম্প্রতি সাভার থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তার থানায় হলমার্ক গ্র“পের মালিক-কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে। তার জানা মতে জিডি রয়েছে ২০/২৫টি।
এদিকে তানভীর মাহমুদ তফসিরের গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া আশুগঞ্জের তারুয়া গ্রামবাসীর চোখ এখন সংবাদপত্র ও টেলিভিশনের দিকে। নজর রাখছেন, খবরে তানভীর সম্পর্কে কিছু বলছে কিনা। তাদের উৎকন্ঠা তানভীরের কি হবে ! তবে এলাকায় তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলতে চান না। তানভীর তার পিতা নূরুল ইসলাম কালু মিয়াকেও তিনদিন আগে অন্যত্র সরিয়ে রেখেছেন। যাতে সাংবাদিকদের কাছে তিনি মুখ খুলতে না পারেন। কয়েকদিন আগে নূরুল ইসলাম সাংবাদিকদের কাছে তানভীরের অনেক গোপন বিষয় ফাঁস করে দেন। এ জন্য তাকে গ্রাম থেকে সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে গ্রামবাসী অনেকে জানিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা যায়, গ্রামের বিভিন্ন দোকানে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তানভীরের ট্রফি নেওয়ার পোস্টার, আবার কোথাও শোভা পাচ্ছে, এ বছরের ২০ জানুয়ারী তাকে দেওয়া কথিত ‘গ্রামবাসীর সংবর্ধনার’ পোস্টার। সেখানে অতিথি হিসেবে ছাপা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দ মোদ্দাছের আলীর নাম। তবে বেশ কিছুদিন ধরে তার অপকর্মের ফিরিস্তি শুনে হতবাক গ্রামের মানুষও। গ্রামে জুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে তানভীর প্রসঙ্গ। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে একেবারে মুখ বন্ধ করেন অনেকে।
সোনালী ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৬শ’ কোটি টাকা অর্থ কেলেঙ্কারির খলনায়ক ৮০টি শিল্প-প্রতিষ্ঠান নিয়ে গড়ে তোলা হলমার্ক গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর মাহমুদের গ্রামে রয়েছে ৬শ শতক জমির ওপর তার বিশাল বাড়ি। বাড়ির সামনে পেছনে রয়েছে পুকুর।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তানভীর গ্রামে এলেই এ বাড়ির গেইট খুলা হতো। তার পিতা থাকেন পাশেই পুরনো টিনশেড ঘরে। তানভীরের ভাই মাহবুবুল আলম হলমার্ক গ্রুপের পরিচালক হিসেবে কর্মরত। তিন বোন শিউলী, পারুল ও নাসরিনকে আশুগঞ্জ উপজেলার মধ্যেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। ১৫ থেকে ২০ বছরের ব্যবধানে এখন দেশের মিডিয়ার অন্যতম আলোচিত বিষয় এই তানভীর মাহমুদ। মালিক হয়েছেন হাজার কোটি টাকার। গ্রামে অনেকের কাছে তার পরিচিতি ‘দানবীর’ হিসেবে। ঈদে তিনি এখানে ট্রাকভর্তি শাড়ি এনে গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেন।
আলমনগর কলেজের একাদশ শ্রেণীর ছাত্র তারুয়ার শিপন জানালেন, তানভীর ভাইরে ভালো মানুষ হিসেবে জানতাম। তবে ব্যাংকে এত টাকা জালিয়াতি করেছেন, শুনে তো হতবাক হয়েছি। কারণ, এসব তো জনগণের টাকা। পাশের আড়াইসিধা গ্রামের সাইদুর রহমান (৫৫) জানান, তানভীরকে একসময় দেখতাম বাবার ব্যবসায় সহায়তা করতে। এই মানুষটা এত কম সময়ে কীভাবে এত টাকার মালিক হইল ভেবে পাই না। ব্যাংকের কর্মকর্তারাইবা কী করলো ?
(আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া)