ব্রাহ্মণবাড়িয়া/ সেপ্টেম্বর ১০ (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)—–
প্রত্যাশা অনুযায়ী তেমন সফলতা অর্জন করতে পারেননি ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রিয় ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা। তাই আগামিতে তিনি এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখলেও, বাস্তবে তা বড়ই কঠিন হবে। এসব কথা এখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নানা শ্রেণী পেশার মানুষের মুখে মুখে। নির্বাচনের আগে দেওয়া নানা প্রতিশ্রুতির অনেক কিছুই তিনি পূরণ করতে পারেননি। এছাড়া নানা কাজে তাঁর একগুয়েমি মনোভাব অনেকেরই অপছন্দ। এ কারণে তিনি ধীরে ধীরে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এ অভিযোগ উপজেলার অনেকের। বিভিন্ন সময়ে উপজেলায় নানা উন্নয়ন কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠে। কিন্তু একজন শীর্ষ জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি জনস্বার্থে বিষয়গুলোর দিকে নজরই দেননি। ছোটখাটো তুচ্ছ অনেক বিষয় নিয়ে তিনি হঠাৎ উত্তেজিত হয়ে যান। একজন সংসদ সদস্য হিসেবে তাঁর আরও সহনশীল মনোভাব হওয়া উচিত। এতে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্বল হবে। অনেক সময়ে উপজেলার সুশীল সমাজের অনেকেই এমপি জিয়াউল হক মৃধাকে নিয়ে এমন মন্তব্য করে থাকেন। তবে সংসদ সদস্য ও জাপা নেতা অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, প্রতিশ্রুতি পূরণে তিনি প্রায় সফল। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর সবচেয়ে বড় অর্জন সরাইল-অরুয়াইল সড়ক। এছাড়া প্রায় ১৫ কোটি টাকার প্রকল্পের মাধ্যমে সরাইল উপজেলাসহ তাঁর নির্বাচনী এলাকায় বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ কাজ করিয়েছেন। অনেক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়া উপজেলার দু’টি কলেজের উন্নয়ন কাজ প্রক্রিয়াধীন। টিআর, কাবিখার কাজ অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় ভালো হয়েছে। মহাজোটের এই এমপি আরো জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে তিনি অ্যাডজাস্টমেন্ট করে আছেন। জাপা নেতা জিয়াউল হক মৃধা এমপি বলেন, শরিক দল হিসেবে কেন্দ্রেই তাঁদের মূল্যায়ন নেই। তাঁদের দলে যেভাবে মন্ত্রিত্ব দেওয়ার কথা ছিল, সেভাবে তাঁরা পাননি। দেশের উন্নয়নে তাঁদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা করা হয় না। সেই হিসেবে স্থানীয়ভাবে তিনি এক রকম আছেন। সরাইল ৫০ শয্যা হাসপাতাল উদ্বোধন নিয়ে এমপি বলেছেন, হাসপাতাল উদ্বোধন নিয়ে যেটা হয়েছে, তা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আসলে আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, তাঁদের দল এখন ক্ষমতায়, তাই উন্নয়ন কর্মকান্ডে তাঁদের নামটা একটু থাকুক। সমঝোতার খাতিরে তিনি এসব বিষয়ে ছাড় দিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার বিভিন্ন কর্মকান্ডে সফলতা ও ব্যর্থতার বিষয় নিয়ে সম্প্রতি নানা মহলে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। কারণ এলাকায় চাউর রয়েছে, আওয়ামী লীগের ব্যানারে আগামি নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসন থেকে নির্বাচন করতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম। উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের মো. হোসেন মিয়া, আনিছ মিয়া, সোলমান মিয়াসহ অনেকে জানান, জাফর খালের ওপর ব্রিজটি প্রায় অকেজো। ইতিমধ্যে ব্রীজের বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে পড়েছে। এই ব্রীজ নির্মাণে এমপি তাঁর প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পারেননি। এছাড়াও এলাকার উন্নয়নে এমপির নানা ব্যর্থতার কারণে এই গ্রামের সাধারণ মানুষ তাঁর ওপর নাখোশ। এলাকাবাসীর অভিযোগ, সরাইল-পানিশ্বর, মলাইশ-শাহজাদাপুর ও রসুলপুর-আজবপুর সড়ক নির্মাণে এমপির প্রতিশ্র“তি দীর্ঘ দিনেও পূরণ হয়নি। তিনি কথা রাখেননি। ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সরাইল-অরুয়াইল সড়ক উদ্বোধনের আগে বর্ষার পানির ঢেউয়ে এই সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়েছে। সিডিউল অনুয়ায়ী সড়কের কাজ হয়নি। উপজেলায় বিভিন্ন সময়ে বরাদ্দকৃত টিআর, কাবিখা ও কর্মসৃজন প্রকল্পে অনিয়ম ও লুটপাটের শেষ নেই। এমপির বরাদ্দের টিআর ও কাবিখায় দুর্নীতি বেশি হয়েছে। অথচ এ ক্ষেত্রে এমপির ভূমিকা অত্যন্ত রহস্যজনক। জলমহাল ইজারা নিয়েও রয়েছে ব্যাপক অভিযোগ। প্রকৃত মৎস্যজীবিদের বঞ্চিত করা হয়েছে। উপজেলায় ভূমিহীনদের মাঝে খাস জমি বন্দোবস্ত প্রদানে স্বজনপ্রীতি করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে দুঃস্থদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে নানা অভিযোগ রয়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকায় সড়ক নির্মাণে নানা অনিয়ম করা হয়েছে। নিন্মমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে বছর না ঘুরতেই সড়ক ভেঙে পড়ছে। এই রকম আরো বহু অভিযোগে সাধারণ মানুষের অনেকেই এখন প্রকাশ্যে বলছেন এমপি জিয়াউল হক মৃধা তাঁর কথা রাখেননি।
(স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া )