সরাইল/ সেপ্টেম্বর ১০ (কুমিল্লাওয়েব ডটকম)—–
টেস্ট রিলিফ টিআরের মাধ্যমে উন্নয়নের নামে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে দীর্ঘদিন। নানা অজুহাতে বরাদ্দ নিয়ে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সদস্যরা সেই অর্থ আত্মসাৎ করছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে স্থানীয় সংসদ সদস্যের বিশেষ বরাদ্দ নিয়ে সেই স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়নি। এ নিয়ে এলাকায় তোলপাড় চলছে। এ বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর স্থানীয় সাংবাদিকরাও পড়েছেন বরাদ্দ সংশিষ্ট মহলসহ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির রোষানলে। কয়েকজন সাংবাদিকের নামে দেওয়া হয়েছে হয়রানিমূলক মিথ্যা মামলা।
বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, ২০১১-১২ইং অর্থ বছরে উপজেলায় টিআর বরাদ্দ আসে মোট ৬ শত ১১ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য। সরাইল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন প্রকল্প কাজে ৬ শত ৮ মেট্টিক টন খাদ্যশস্য ছাড়পত্র (ডি.ও) দেওয়া হয়। অনুউত্তোলিত রয়েছে ৩ মেট্টিক টন। প্রকল্পে কাজ না করায় ১ টন খাদ্যশস্য ফেরত (রির্টান) চাওয়া হয়েছে। বাকি প্রকল্পগুলোর কাজ যথাযথ হয়েছে বলে দাবি করেছেন প্রকল্প কর্মকর্তা। কিন্তু সরেজমিন গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, টিআরের অনেক প্রকল্পে হয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি। কোথাও কোথাও প্রকল্পের নাম নিশানাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরমধ্যে গত ১০ জুন স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা কর্তৃক উপ-বরাদ্দ দেয়া টিআর প্রকল্প দাখিল পত্রের ২৪ ক্রমিকে ‘চুন্টা শহীদ স্মৃতিসোধ নির্মাণ’ প্রকল্প নামে ৪ মেট্টিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে চুন্টা গ্রামের মো. নুরুল ইসলাম প্রকল্প সভাপতি হয়ে কাগজে কলমে স্বাক্ষর করে তিনি বরাদ্দের ৪ টন চাল উত্তোলনও করেন। কিন্তু এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে চুন্টা গ্রামে সম্প্রতি কোন স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। এদিকে অর্থবছর পেরিয়ে গেলেও টিআর বরাদ্দে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ না হওয়ায় বিভিন্ন মহলে সমালোচনার ঝড় উঠে। বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ে লোকমুখে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় এ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বিপাকে পড়ে যান প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশি¬ষ্টরাসহ একটি প্রভাবশালীমহল। এদিকে এই প্রকল্পের অনিয়ম নিয়ে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় একাধিক পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এর জের ধরে প্রকল্প সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম নিজে বাদী হয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিকের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। তিনি মামলায়ও টিআর বরাদ্দ উত্তোলনের কথা স্বীকার করে স্মৃতিসৌধ হবে বলে দাবি করেন। এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, এখানে শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা বলে একটি স্বার্থান্বেষী মহল টিআর বরাদ্দ আত্মসাৎ করেছে। চুন্টা ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি মো. মুনিরুল ইসলাম বলেন, শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণের নামে অর্থ আত্মসাৎকারীরা দেশ ও জাতির শত্রু। তিনি বলেন, স্মৃতিসৌধের নামে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ তদন্ত করে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। চুন্টা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, চুন্টা এলাকায় একটি স্মৃতিসোধ হবে এটি ছিল আমাদের গৌরবের বিষয়। এই প্রকল্প কমিটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হবে বলে আমার কাছেসহ এলাকার বিভিন্ন জনের কাছে আর্থিক সহায়তাও চেয়েছিল। আমরা বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়ে ছিলাম। কিন্তু সেই স্মৃতিসৌধ আমি কোথাও দেখিনি। এ বিষয়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণের টিআর প্রকল্পের সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম টিআরের চাল উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, শহীদ স্মৃতিসৌধ নির্মাণ কাজ চলছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মো. মিজানুর রহমান বলেন, টিআর বরাদ্দের চাল অর্থবছর শেষ হওয়ার আগেই তারা উত্তোলন করে নিয়ে গেছে। তারা বলেছিল কাজ করাবেন। কাজটি হয়েছে কি না তা আমার জানা নেই। তবে উত্তোলিত বরাদ্দ দিয়ে ইতিমধ্যে কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। কাজ না হলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম বলেন, এই প্রকল্পটি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে এবং এ ব্যাপারে তদন্তের নির্দেশ আছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, টিআর বরাদ্দে চুন্টা এলাকায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের কথা ছিল। তবে ওই এলাকায় স্মৃতিসৌধ সম্পন্নের খবর এখনো পাইনি। তিনি বলেন, শহীদদের স্মৃতিকে নিয়ে অনিয়ম অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ এবং বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। স্মৃতিসৌধ নিয়ে কোন অনিয়ম আমি কেন, কেউ বরদাস্ত করবে না। সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
(স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া )