
হলমার্ক কেলেঙ্কারির নায়ক হাজার কোটি টাকার মালিক তানভীর মাহমুদ তফসিরের পিতা নূরুল ইসলাম কালু মিয়া বসবাস করেন পুরনো ভাঙা টিনশেড ঘরে। যদিও পাশেই রয়েছে ২৭ বিলাসবহুল গাড়ির মালিক ছেলে তানভীরের আলিশান বিল্ডিং। এছাড়াও রাজধানী ঢাকায় রয়েছে তার রাজকীয় প্রাসাদ। ছেলের সেই ভবনে পিতা নিষিদ্ধ। ছেলের আলিশান বাড়ি দূর থেকে দেখা ছাড়া পিতা কালু মিয়ার ভেতরে প্রবেশের অধিকার নেই।
সেই হলমার্ক কেলেঙ্কারির হোতা তানভীর মাহমুদ তফসিরের পরিবারের হাল জানতে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার তারুয়া গ্রামে গিয়ে এসব তথ্য জানা গেছে। তানভীরের পিতা মো. নূরুল ইসলাম কালু মিয়া বলেন, তানভীর গ্রামে এলেই এই বিল্ডিংয়ের গেইট খোলা হয়। বিল্ডিংয়ে আছে নামি-দামি অনেক ফার্নিচার। এ বিল্ডিংয়ের চাবি আমার কাছে নেই। আমি টিনের ঘরেই থাকি। সত্তরোর্ধ্ব কালু মিয়া বলেন, আমি এ্যালমোনিয়ামের ব্যবসা করতাম। আমার পাঁচ ছেলেমেয়ের মধ্যে তানভীর বড়। তাকে ঢাকায় দোকান দিয়ে ব্যবসা করতে জমি বিক্রি করে টাকা দিয়েছি। এখন শুনছি কেলেঙ্কারির কথা। আমার ছেলে এসব আমারে জানায়নি।
গ্রামবাসী জানান, গতবছর প্রায় দুই কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামে রাজকীয় এক সংবর্ধনার পর তানভীর ব্যাপক আলোচনায় আসে। সেই সংবর্ধনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী। আগামি সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ব্যানারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন থেকে তানভীর নির্বাচন করতে এলাকায় গণসংযোগ চালায় এবং বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করেন। তারুয়া গ্রামের আব্দুল জলিল, কাশেম আলী, রহমত উল্লাহ, জাহাঙ্গীর আলমসহ অনেকের প্রশ্ন-মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনে চাকরি করে এতো অল্প সময়ে কিভাবে তানভীর শিল্পপতি হয়ে গেছেন। তারা আরো জানান, মাত্র কয়েকবছর আগে তানভীরের পিতা কালু মিয়া গ্রামে ফেরি করে এ্যালমোনিয়াম বিক্রি করতো। বাজারের ছোট্ট দোকানে মাঝে মধ্যে তানভীর নিজেও বসতো। অল্প আয়ে দু’বেলা খাবার জোগাড় করতে তাদের কষ্ট হতো। তানভীর ছিলেন উচ্চাভিলাষী। ২০০০ সালে অধিক আয়ের উদ্দেশ্যে ঢাকায় পাড়ি জমান তিনি। এখন তানভীর এলাকায় গাড়ি বহর নিয়ে আসে এবং কোটি টাকা খরচ করেন।
এলাকাবাসী ও তানভীরের পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০০৬ সালে সোনালী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন তানভীর। ব্যাংক ঋণ পেতে তিনি কর্মকর্তাদের বিপুল পরিমাণ অর্থ উপহার দিতেন। আওয়ামী মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। তার স্ত্রী ও হলমার্ক গ্রুপের চেয়ারম্যান জেসমিন ইসলামের পরিচয় হয় প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলীর সঙ্গে। তাদের এই পরিচয় হয় ঢাকার এক ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর মাধ্যমে। এই পরিচয় সূত্র ধরে প্রভাব খাটিয়ে এবং বিলাস বহুল গাড়ি উপহার দিয়ে ব্যাংকের সব নিয়ম ভঙ্গ করে হাজার কোটি টাকা ঋণ নিতে শুরু করে তানভীর মাহমুদ তফসির। এছাড়া তিনি সখ্য গড়ে তোলেন সরকারের উচ্চপর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে। নিজেকে রক্ষা করতে আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় হওয়ার চিন্তা করেন তানভীর। এতে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী। তানভীর নিজেই গ্রামে রাজকীয় এক সংবর্ধনার আয়োজন করেন। সেই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টার কাছ থেকে তিনি স্বর্ণের ক্রেস্ট গ্রহণ করেন। সেই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা মোদাচ্ছের আলী তানভীর মাহমুদ তফসিরকে নতুনভাবে পরিচয় করিয়ে দেন।
(আরিফুল ইসলাম সুমন, স্টাফ রিপোর্টার ব্রাহ্মণবাড়িয়াঃ)