আরিফুল ইসলাম সুমন ॥
পুলিশ বলছে তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলেই গ্রেপ্তার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার নরসিংহপুর গ্রামের ছিদ্দিকা খাতুনের হত্যা মামলার আসামিরা এলাকায় প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। থানায় খুনের মামলা দায়েরের একমাস পেরিয়ে গেলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে আসামি গ্রেপ্তার করছে না। বিষয়টি নিয়ে ওই এলাকার সাধারণ মানুষের মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকে পুলিশের এহেন ভূমিকায় নানা প্রশ্ন তুলেছেন। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুজ্জামান বলেন, খুনের মামলা রেকর্ড হলেই আসামি গ্রেপ্তার করা যায় না। কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হয়। তদন্তে দোষী প্রমাণিত হলে অবশ্যই আসামি গ্রেপ্তার করা হবে। মামলার তদন্ত চলছে। এতে কোনো প্রভাব বিস্তার নেই।
গত রোববার সরেজমিন জানা যায়, হত্যাকান্ডের পর ওই এলাকায় পুলিশ দুই বার তদন্তে যান। মামলার আসামিরা বীরদর্পে গ্রামে অবস্থান করছে। নিহতের একমাত্র পুত্র মামলার বাদী মো. বাবুল মিয়া জানান, পূর্ব শত্রুুতার জের ধরে গত ২৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় আসামিরা নৃশংসভাবে কুপিয়ে তার মাতা ছিদ্দিকা খাতুনকে খুন করে। এ ঘটনায় ৩০ ডিসেম্বর তিনি বাদী হয়ে ২৫ ব্যক্তির বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। নিহতের স্বামী হাজী ফুল মিয়া অভিযোগ করে বলেন, মামলার আসামিরা ও পুলিশ এখন এক হয়ে গেছে। গত ৩ জানুয়ারী খুনের মামলার ১৬নং আসামি ওমর আলী বাদী হয়ে ছিদ্দিকা হত্যা মামলার বাদী বাবুল সহ তার আত্মীয় স্বজন ২৯ ব্যক্তির বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দায়ের করে হয়রানি করছে। থানাপুলিশ বেশ আগ্রহের সাথে মামলাটি রেকর্ড করেন। নিহতের জামাতা হাজী আবু তালেব জানান, পুলিশের আসকারা পেয়ে খুনিরা মিথ্যা দিয়ে তাদের হয়রানি করছে। হুমকি-ধমকি দিয়ে আসছে প্রতিনিয়ত।
এদিকে গ্রাম ঘুরে ছিদ্দিকা হত্যা মামলার বেশক’জন আসামিকে পাওয়া যায়। মামলার ১৪নং আসামি তাজু মিয়া এ খুনের বিষয়ে কিছু বলতে অপরাগতা প্রকাশ করে। ১০ নং আসামি লোকমান মিয়া বলেন, এ হত্যাকান্ডের সাথে আমরা জড়িত নয়। পুলিশও বিষয়টি জানতে পেরেছে। আমরা আদালত থেকে জামিন নেয়নি। বাড়িতেই থাকছি। মামলার প্রধান আসামি ফরিদ মিয়ার বাড়িতে গেলে কন্যা পরিচয় দিয়ে তানিয়া আক্তার জানান, তার পিতা ফরিদ মিয়া কিছুক্ষণ আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন। হত্যাকান্ডের দুইদিন পর দিনের বেলায় দারোগা কামরুজ্জামান বাড়িতে এসে গালমন্দ করে গেছেন। তানিয়া বলেন, সরাইল থানার বর্তমান ওসি মো. গিয়াস উদ্দিন আমার প্রয়াত চাচা শহীদ ফারুকুজ্জামানের একান্ত বন্ধু ছিলেন। তারা এক সঙ্গে লেখাপাড়া করেছেন। দারোগার অসুলভ আচরনের বিষয়টি থানার ওসিকে জানানোর পর আর কোন দিন পুলিশ বাড়িতে আসেনি। ফরিদ মিয়ার মাতা হাজী ফজিলত নেছা বলেন, তারা ষড়যন্ত্র করে আমার ছেলেকে খুনের মামলায় আসামি করেছে। থানার ওসি সাহেব আমাদের পারিবারিক বিষয়ে অনেক কিছুই অবগত আছেন। সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য জোবাইদা পারুল আমার ফুফাত বোন। এছাড়া মন্ত্রীর লোক আমাদের আত্মীয়। বিষয়টি তাদের জানিয়েছি। তারা আশ্বাস দিয়েছেন। মামলার ১৭নং আসামি আনছর আলী বলেন, তারা নিজেরাই খুন করে আমাদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আমাদেরও ওপর মহলে লোকজন রয়েছে। বিষয়টি তারাই দেখছেন।
নরসিংহপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক ওয়াদুদ মিয়া (৪৬) বলেন, হত্যাকান্ডটি রহস্যজনক। পুলিশ দুই বার তদন্তে এসে ছিলেন। আসামিরা মাঝে মধ্যে গ্রামেরই অবস্থান করে। স্থানীয় ইউপি সদস্য হাজী লাইছ মিয়া বলেন, এই হত্যাকান্ডের ব্যাপারে পুলিশের কোন তৎপরতা নেই। আসামিরা এলাকাতেই রয়েছে। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে এলাকার মানুষ নানা মন্তব্য করছেন। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হাবিবুর রহমান বলেন, আমার জানা মতে ওপর মহলের চাপে পুলিশ এ মামলায় বেকায়দায় রয়েছে। তবে ওই এলাকায় কিছু নৌ ডাকাত রয়েছে। পুলিশ অন্তত এদের গ্রেপ্তার করলেও গ্রামের মানুষ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতো।
এ ব্যাপারে সরাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. গিয়াস উদ্দিন বলেন, এলাকার কে কি বলল তা দেখা ও শুনার প্রয়োজন নেই। হত্যা মামলাটির তদন্ত চলছে। আপনারা যা পেয়েছেন তা-ই লিখে যান।