নির্যাতিতা গৃহবধূ সাবিনা ও তার তিন কন্যা সন্তান

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গৃহবধূকে হিল্লা বিয়ে দিতে নির্যাতন

আরিফুল ইসলাম সুমন ॥

নির্যাতিতা গৃহবধূ সাবিনা ও তার তিন কন্যা সন্তান
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় হিল্লা বিয়েতে রাজি না হওয়ায় গৃহবধূ সাবিনাকে শারীরিক নির্যাতনের পর গ্রামছাড়া করেছে শ্বশুরবাড়ির লোকেরা। নির্যাতিতা ওই গৃহবধূ তিন সন্তান নিয়ে জেলার সরাইল উপজেলার কালীকচ্ছ গ্রামের পিত্রালয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এ ঘটনায় নির্যাতিতা গৃহবধূ বাদী হয়ে থানায় নারী নির্যাতন মামলা করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, রহস্যজনক কারণে পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না।

মামলা সূত্র ও গৃহবধূর পরিবার জানায়, সদর উপজেলার মালিহাতা গ্রামের দিনমজুর হারুন মিয়ার স্ত্রী সাবিনা। গত বছরের ১৯ আগস্ট পারিবারিক বিষয় নিয়ে রাগে ক্ষিপ্ত হয়ে হারুন তার স্ত্রী সাবিনাকে ‘তালাক’ শব্দটি উচ্চারন করেন। পরে হারুন অনুতপ্ত হয়ে দু:খ প্রকাশ করেন। কিন্তু এ বিষয়টিকে পুঁজি করে গৃহবধূর শ্বশুরবাড়ির লোকসহ কিছু সমাজপতি বেঁকে বসেন। তারা সিদ্ধান্ত দেন সাবিনাকে হিল্লা বিয়ে দিতে হবে। পরে হারুন আবার নতুন করে সাবিনাকে বিয়ে করবে। এ ঘটনায় গৃহবধূ সাবিনা তার তিন কন্যা নিয়ে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা ওই গৃহবধূর বাড়িতে গিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে হারুন-সাবিনার দাম্পত্য জীবন এক করে দিয়ে আসেন। তখন গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বলেছিলেন, রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক দিলে তালাক কার্যকর হয় না। হিল্লা বিয়ে আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

গৃহবধূ সাবিনা জানান, ‘প্রশাসনের হস্তক্ষেপের পর আমাদের দাম্পত্য জীবন ভালই চলছিল। কিন্তু শ্বশুরবাড়ির আশপাশের ক’জন লোক বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে থাকেন। তারা গ্রামে প্রচার করতে থাকেন হিল্লা বিয়ে ছাড়া আমাদের দাম্পত্য জীবন বৈধ নয়। সম্প্রতি তারা আমাকে হিল্লা বিয়ে দিতে চাপ সৃষ্টি করেন। বর্তমানে আমি অন্ত:সত্ত্বা জেনেও তারা আমার ওপর নির্যাতন চালায়। এর প্রতিবাদ করায় গত ২৭ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেশী হোসেন মিয়া, আনোয়ার, হান্নান, জুয়েল, আলমগীর ও জয়নাল মিয়া জোরপূর্বক ঘরে ঢুকে আমাকে বিবস্ত্র করে এলোপাতাড়ি পেটাতে থাকে। আমাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় গত ১১ জানুয়ারি আমি নিজে বাদী হয়ে ছয়জনের বিরুদ্ধে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর মডেল থানায় নারী নির্যাতন মামলা করেছি। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এতোদিনেও পুলিশ আসামিদের গ্রেফতার করছে না।’ সাবিনার স্বামী হারুন মিয়া জানান, ‘আমি রাগের মাথায় স্ত্রীকে তালাক বলেছিলাম। পরে আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। ইউএনও, থানার ওসি ও চেয়ারম্যান বাড়িতে এসে বিষয়টি মিমাংসা করে দিয়ে গেছেন। তারপরও প্রতিবেশী কিছু লোক আমার স্ত্রী সাবিনাকে হিল্লা বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তারা প্রভাবশালী আমাকেও হুমকি দিচ্ছে। সাবিনাকে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করেছে। থানায় মামলা করে কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।’ সাবিনার পিতা মো. ইউসুফ মিয়া জানান, ‘নির্যাতনের শিকার হয়ে সাবিনা নয় দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়। তাদের ভয়ে মেয়েটি শ্বশুরবাড়িতে যেতে পারছে না। ওই এলাকার অনেকের কাছে সহযোগিতা চেয়েও পাইনি। আইনের আশ্রয় নিয়েও কোন ফল পাচ্ছি না। এই পরিস্থিতিতে মেয়েটি মানসিকভাবে একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে।’

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রব বলেন, মামলার তদন্ত চলছে। আসামি গ্রেপ্তারে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

Check Also

আশুগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামির মরদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :– ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মো. হারুন মিয়া (৪৫) নামে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির ...

Leave a Reply