অতি-সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের জুয়া ও গাঁজার আসর
সরাইলে বেপরোয়া জুয়াড়ীরা পুলিশ অভিযান চললেও সুফল নেই
আরিফুল ইসলাম সুমন, সরাইল : অতি-সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন স্থানের জুয়া ও গাঁজার আসর
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চিহ্নিত জুয়াড়ীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাজার শরীফের ওরশ, বাউল গান ও নামকা ওয়াস্তে ওরশের নামে প্রকাশ্যে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে জুয়ার আসর। এতে এলাকায় বৃদ্ধি পেয়েছে চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি। দীর্ঘ হচ্ছে জুয়ায় আসক্ত বিপথগামী যুবকদের মিছিল। অনেক সময়ে জুয়ার আসরগুলোতে পুলিশ ডাক-ঢোল পিঠিয়ে অভিযান চালায়। কিন্তু এতে কোন সুফল পাচ্ছেন না এলাকার মানুষেরা। জুয়াড়ীরাও পুলিশি অভিযান বা গ্রেপ্তারকে পরোয়া করে না। কারণ পুলিশ থানা থেকে রওয়ানা হওয়ার আগেই খবর পৌঁছে যায় তাদের কাছে। এছাড়াও জুয়া খেলার অপরাধে গ্রেপ্তার হয়ে সকালে কোর্টে চালান হলে বিকেলেই জুয়াড়ী ছাড়া পেয়ে যায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এখানকার বিভিন্ন এলাকায় দিনে ও রাতে চলে জুয়া। তার সাথে চলে গাঁজার আসর। পুলিশের উপস্থিতিতে জুয়া খেলার নজিরও রয়েছে। জুয়া খেলা রোধে পুলিশকে খবর দিলে অনেক সময় তারা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়। দুর্বল জুয়া আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে জুয়াড়ীরা সহজে ছাড়া পেয়ে যায় বলে পুলিশ ইচ্ছে করেই তাদের গ্রেপ্তার করতে চায় না। এখানকার অধিকমাত্রার জুয়া খেলার বিষয় নিয়ে খোদ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সাফায়াৎ মুহম্মদ শাহে দুল ইসলাম থানাপুলিশের ওপর নাখোশ। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন বিষয়টি নিয়ে জেলার উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করবেন। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আইন শৃঙ্খলা সভায় জুয়া খেলা রোধ সহ চিহ্নিত জুয়াড়ীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়। এ বিষয়ে উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, জুয়া খেলা রোধে থানাপুলিশের ভূমিকা সন্দেহ জনক। এলাকায় জুয়া খেলা চলা অবস্থায় পুলিশকে খবর দিলে ব্যবস্থা নিবেন বলে শুধু আশ্বাস দেন। কার্যত কোন ব্যবস্থাই নেয় না। আইন শৃঙ্খলা সভায় জুয়ার সম্রাট আউয়াল মিয়াকে গ্রেপ্তারের সিদ্ধান্ত হলেও পুলিশ রহস্যজনক কারণে তাকে গ্রেপ্তার করছে না।
এলাকাবাসী জানান, উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের জুয়ার সম্রাট আউয়াল মিয়া ও নোয়াগাঁও গ্রামের আব্দুল কাদিরের নেতৃত্বে দু’টি শক্তিশালী জুয়ার সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। এ দুই সিন্ডিকেটে প্রায় ২৫ চিহ্নিত জুয়াড়ি রয়েছে। তবে সিন্ডিকেটের দুই নেতা আউয়াল ও আব্দুল কাদিরের দাবি থানাপুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাবের সোর্স ও এলাকার প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করেই তারা জুয়ার আসর চালায়। এছাড়াও যে অনুষ্ঠানে তারা জুয়ার আসর বসায় সেই অনুষ্ঠানের কমিটির লোকদের মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়। সেই টাকায় বিভিন্ন এলাকা থেকে কন্ঠ শিল্পী এনে গান-বাজনা করা হয়। সরাইল থানার ক্যাশিয়ার বিশেষ ব্যাটালিয়ন আনসার সদস্য মো. সোনা মিয়া থানাপুলিশের চুক্তির টাকা নেয়। আর ডিবি পুলিশ ও র্যাবের টাকা নেয় এলাকার চিহ্নিত তাদের সোর্সরা। এ বিষয়ে সরাইল থানার দ্বিতীয় কর্মকর্তা (এসআই) কামরুজ্জামান জুয়ার আসর থেকে টাকা নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, এ ধরণের কোন চুক্তির বিষয় আমাদের জানা নেই। যেখানেই জুয়া খেলা চলে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ অভিযান চালায়। জুয়া বা জুয়াড়িদের সাথে কোন আপোষ নেই।
সরাইল থানার একাধিক পুলিশ সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্র্তে জানান, জুয়া আইনটি অত্যন্ত দুর্বল। জুয়াড়ি গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করলে কিছু অর্থদন্ড বা আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বিকেলেই ছাড়া পেয়ে যায়। এ কারণে জুয়াড়িরা পুলিশি গ্রেপ্তারকে তেমন পরোয়া করে না। পুলিশও তাদের গ্রেপ্তারে আগ্রহ দেখান না।