কুমিল্লা প্রতিনিধি :
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচনের আর বাকি ৪৮ ঘণ্টা। মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রচার মঙ্গলবার রাত ১২টায় শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রচারণার শেষ মুহূর্তেও মেয়র প্রার্থীরা পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। বিএনপি এ নির্বাচন বর্জন করলেও সদরের সাবেক পৌর মেয়র ও কুমিল্লা (দ.) জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক মনিরুল হক সাক্কু সম্মিলিত নাগরিক ফোরামের মেয়র প্রার্থী হয়ে মঙ্গলবার দিনভর প্রচারণা চালিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খানও ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় তিনি শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় অংশ নেন। আওয়ামী লীগের দুই তরুণ প্রার্থী পরিচয়ে মাঠে থাকা নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠুও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন।
শেষ দিনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সরক্ষিত মহিলা আসনের কাউন্সিলরা নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের সর্বত্রই ব্যাপক প্রচারনা চালান। প্রার্থীদের সাথে যেমন সমর্থকরা ছিল তেমনি প্রার্থী ছাড়া তাদের পক্ষে প্রতিটি আনাচে কানাচে সমর্থকরা ব্যস্ত ছিলেন শেষ মুহুর্তের প্রচারনায়।
প্রতিটি প্রার্থীর চেহারায় ক্লান্তির ছাপ থাকলেও সমর্থকদের মাঝে ছিল প্রাণচাঞ্চল্য। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আইন শৃঙ্খলা থাকবে র্যাব, পুলিশ, তাদের সহায্যকারী হিসেবে থাকবে আনসার, ভিডিপি সদস্যরা। নির্বাচনকে ঘিরে কুমিল্লা নগরী এখন পোষ্টারের নগরীতে পরিণত। এর বাইরে কিছু ব্যানার রাস্তার বিভিন্ন স্থানে টানানো হয়েছে। জীবন্ত প্রতীক নিয়ে প্রথম দিকে কিছু মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী গনসংযোগে মাঠে নামার চেষ্ঠা করলেও নির্বাচন কমিশনের ভ্রাম্যমান ম্যাজিষ্ট্রেটের দল তাৎক্ষনিক বাধা প্রদান করে। এতে পরে আর কেউ ওই সব প্রতীক নিয়ে মাঠে নামার সাহস পায়নি।
নগরীতে শোভা পাচ্ছে আনারস, হাঁস, টেলিভিশন, চশমা, জাহাজের হাজার হাজার পোষ্টার, পিছিয়ে নেই এক্ষেত্রে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও। আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজাল খানের প্রতীক আনারস অন্য কোথাও আসল আনারস নিয়ে চলাফেরা না করলেও তার প্রধান নির্বাচনী অফিসে বেশ কিছু আসল আনারস দেখা যায়। একই অবস্থা মনিরুল হক সাক্কু’র নানুয়া দীঘির পাড়ের বাসভবনে। সেখানেও রয়েছে জীবন্ত হাঁস।
এর বাইরে এয়ার আহমেদ সেলিমের নির্বাচনী প্রতীক টেলিভিশন শোভা পাচ্ছে পুরাতন চৌধুরী পাড়ার প্রধান নির্বাচন অফিসে। অবশ্য সেটা দেখে দেখে তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা নির্বাচনী বিভিন্ন খবরা-খবর সংগ্রহে ব্যস্ত। আর নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের চশমা এবং এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠু’র জাহাজ নিয়ে কোন আলোচনা নেই। তানিমের অফিসে চশমার বড় পোষ্টার আর মিঠু’ অফিসে রয়েছে একটি জাহাজের ছোট্র প্রতীক।
নগরীতে যে দিকে চোখ যায় সে দিকেই পোষ্টার, ব্যানার। এবার যেহেতু দেয়াল পোষ্টার লাগানো নিষেধ ছিল, তাই সকল প্রার্থীই নগরীর প্রতিটি সড়কের দু’পাশ ও রাস্তার উপড়ে পোষ্টার ঝুলিয়ে দেয়। শীতের কুয়াশায় পোষ্টার ছিড়ে যাওয়া থেকে রেহাই পেতে এবার সকল প্রার্থী বাড়তি নিরাপত্তা রক্ষায় পোষ্টার ঢেকে দেয় পলিথিনের আবরনে।
নগরীর পশ্চিম দিকে প্রবেশ পথ শাসনগাছা থেকে সদর দক্ষিণের পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, পূর্বে চৌয়ারা থেকে উত্তরে কাপ্তানবাজার পাকা রাস্তার মাথা পর্যন্ত যে দিকে চোখ যায় সেদিকেই মনিরুল হক সাক্কুর হাঁস, অধ্যক্ষ আফজল খানের আনারস, এয়ার আহমেদ সেলিমের টেলিভিশন, নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিমের চশমা, এডভোকেট আনিসুর রহমান মিঠুর’র জাহাজ প্রতীকের পোষ্টারের ছড়াছড়ি।
এছাড়া নিবাচর্নী মাঠে এখন পর্যন্ত থাকা অপর ৩ মেয়র প্রার্থী সালমান সাঈদ, চঞ্চল কুমার ঘোষ এবং একমাত্র মহিলা প্রার্থী শিরিন আক্তারের কোন নির্বাচনী প্রচারনা নেই। তাদের পোষ্টারও নগরীতে চোখে পড়েছে সামান্যকিছু। এবার নির্বাচনী প্রচারনায় বাধ্যবাধকতা থাকায় দুপুর ২ থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত মাইক যোগে প্রচার প্রচারনা শুরু করে প্রার্থীর পক্ষের লোকেরা। এ জন্য তারা অপেক্ষা করতে থাকে কখন ২ টা বাজবে।
গতকাল প্রচার প্রচারনার শেষ দিনে মাইকিং ছিল চোঁখে পড়ার মত। শো ডাউন নিষিদ্ধ থাকলেও গতকাল সাড়ে ১২ টায় রানীর বাজার, বাগিচাগাঁত্ত এলাকায় আ’লীগ প্রার্থী আফজল খানের গণ সংযোগ মিছিলে রূপান্তরীত হয়। এ সময় রাস্তার যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পোষ্টার ঝুলানোতে কেউই পিছিয়ে নেই। প্রতিটি এলাকায় প্রতিটি মেয়র প্রার্থীর হাজার হাজার পোষ্টার।
গতকাল বিকেল পর্যন্ত কোন প্রার্থীর বিরুদ্ধেই কারো কোন অভিযোগ ছিল না। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন এলাকায় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিরুদ্ধে টাকা বিলির অভিযোগ উঠলেও এখন পর্যন্ত ভ্রাম্যমান আদালত বা কোন আইন শৃংঘলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে এরকম কেউ ধরা পড়েনি। নগরীর বাইরে পশ্চিম দিকের শাসনগাছা কৃষি অফিস সংলগ্ন এলাকা, পূর্বদিকে চকবাজার, দক্ষিন দিকে জাঙ্গালিয়া এবং উত্তর দিকে কাপ্তান বাজার এলাকায় চেকপোষ্ট বসিয়ে পুলিশ যানবাহন তল্লাশী করছে। এছাড়া র্যাব ও পুলিশের দল নগর জুড়ে টহল দিচ্ছে। কোথাও কোন বিশৃঙ্খলার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রধান নির্বাচন কন্ট্রোলরুম বীরচন্দ্র নগর মিলনায়তন ও গন পাঠাগার (টাউনহল) এবং পুরাতন জেলা পরিষদে অবস্থিত রিটার্নিং অফিসারের কার্যলয়ের চারপাশে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার গ্রহন করা হয়েছে। র্যাব সূত্র জানায়, গতকাল মধ্য রাতের পর থেকেই র্যাব পুরোপুরি মাঠে নেমে পড়বে। এছাড়াও ২২শ পুলিশ ও ৯শ’ আনসার আইন শৃংখলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এ মূহুর্তে ২০/২২ টি টহল দল মাঠে থাকলেও নির্বাচনের দিন ২৭টি পুলিশের টহলদল থাকবে মাঠে।
এদিকে, বহিরাগত সবাইকে মঙ্গলবার মধ্যরাতের মধ্যে কুমিল্লা নগরী ছেড়ে চলে যেতে হবে। বুধবার থেকে তাদের পাওয়া গেলে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন এলাকার ভোটার নন, স্থায়ী বাসিন্দা ও বসবাসকারী নন- এমন লোকদের বহিরাগত বলা হচ্ছে। বহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সীমানা এলাকায় বিজিবি পাহারায় থাকবে।
কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাধারন ওয়ার্ড ২৭টি ও সংরক্ষিত ৯টি ওয়ার্ড। ভোট কেন্দ্র ৬৫টি এবং ভোট কেন্দ্রে কক্ষ ৪২৭টি। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশন ভোট পর্যবেক্ষন জন্য সিসিটিভি ব্যবহার করবে। নির্বাচনে এ মূহুর্তে ৮জন মেয়র প্রার্থী থাকলেও ৫ জনের উপস্থিতি লক্ষ্যনীয়। সাধারন কাউন্সিউর পদে ২১৭ এবং সরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্ধন্ধিতা করছেন।