সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুমিল্লা :
কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচারণার শেষ দিনে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছে ৫ মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। গতকাল সকাল থেকেই প্রার্থীরা বের হয়ে যান প্রচারণা চালাতে। প্রার্থীদের সাথে সাথে প্রার্থীদের সহধর্মিনীরা মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় ভোট চেয়েছেন। অনেক প্রার্থীর সমর্থকরা মিছিল করেছেন। করেছেন আচরণ বিধি লঙ্ঘন। আর ভোটের জন্য উড়াচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।
মেয়র প্রার্থী অধ্যক্ষ আফজল খানঃ
মেয়র প্রার্থী আফজল খান গতকাল সকাল থেকে মহানগরের শহরের পুরাতন চৌধুরীপাড়া, অশোকতলা ও বিসিক শিল্পএলাকায় গণসংযোগ করেছেন। তার বড় ছেলে মাসুদ পারভেজ খান ইমরান নির্বাচন সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি সদরের পূর্বাঞ্চলের এলাকাগুলোতে গণপ্রচারণা চালিয়েছেন। বিকেল ৪টায় শিক্ষার্বোড এলাকায় উঠান বেঠকে অংশ নেন। সন্ধ্যা ৬ টায় চকবাজার ও ৭টায় মোগলটুলি এলাকায় দুটি পথসভায় অংশ নেন।
মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুঃ
মেয়র প্রার্থী সাবেক পৌর মেয়র মনিরুল হক সাক্কু গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২৭ ওয়ার্ডের কর্মীদের সাথে বসে পোলিং এজেন্ট ও নির্বাচন সংশ্লিষ্ট ব্যাপার নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি নিজে কোন এলাকায় গণসংযোগে না গেলেও তার বিভিন্ন নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রচারণা চালিয়েছেন।
মেয়র প্রার্থী এয়ার আহমেদ সেলিমঃ
মেয়র প্রার্থী সেলিম গতকাল মহানগরের বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। কাটাবিল, হযরতপাড়া, কাশারীপট্রিসহ বিভিন্ন এলাকায় তিনি প্রচারণা চালিয়েছেন।
মেয়র প্রার্থী নুর উর রহমান মাহমুদ তানিমঃ
মেয়র প্রার্থী নুর উর রহমান মাহমুদ তানিম গতকাল প্রচারণার শেষ দিনের সকালে মুন্সেফবাড়ি, মনোহরপুর, কান্দিরপাড়, সালাউদ্দিন রোড, দুপুরে আশ্রাফপুর, পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড, ঠাকুরপাড়া থেকে বাগানবাড়ি, সন্ধ্যায় জেলখানা, ছোটরা এলাকায় গণসংযোগ করেন।
মেয়র প্রার্থী আনিসুর রহমান মিঠুঃ
মেয়র প্রার্থী আনিছুর রহমান মিঠু গতকাল মহানগরের হযরতপাড়া, চকবাজার, টিক্কাচর, সুজানগর, বাগিচাঁগাও, গোবিন্দপুর ও ঠাকুরপাড়া এলাকায় গণসংযোগ করেন।
ভোটের জন্য কালো টাকার ছড়াছড়িঃ
আগামীকাল বহুপ্রতীক্ষিত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। তাই কুমিল্লা মহানগরের মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে টাকা দিয়ে ভোট কেনার যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। তার পাশাপাশি চলছে এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর প্রার্থীর মিথ্যা গুজব ছড়ানোর প্রবণতা। আবার একজন আরেকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, নির্বাচনের পর দেখে নেয়ার কথা বলছে । প্রতি মুহূর্তে আচরণ বিধি লঙ্ঘন হচ্ছে। সব মিলিয়ে কানায় কানায় উত্তেজনা বিরাজ করছে কুমিল্লা মহানগরের প্রত্যেকটি এলাকায়। নির্বাচনের ব্যয়ের ক্ষেত্রে একজন মেয়র সবোর্চ্চ ১৫ লক্ষ টাকা ও ১২ হাজার ভোটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ ওয়ার্ডে একজন কাউন্সিলর প্রার্থী সবোর্চ্চ ১ লক্ষ টাকা ব্যয় করার কথা থাকলেও এই আইন কেউই মানছে না। লক্ষ-কোটি টাকা লেনদেন হচ্ছে মহানগরে। কুমিল্লা মহানগরের ১৫ নং ওয়ার্ডে নতুন কাউন্সিলর প্রার্থীদের মধ্যে টাকা দিয়ে ভোট কেনার যুদ্ধ চলছে। সূত্রমতে, ১৫ নং ওয়ার্ডের নতুন এক কাউন্সিলর প্রার্থী গতকাল ওই ওয়ার্ডের গদার মার কলোনি , কাটাবিল এলাকায় একেকটি ভোট ১ হাজার টাকা করে কিনছে। বিশেষ করে গদার মার কলোনিতে প্রায় ৩ শত রিকসাওয়ালা বসবাস করে। তাদেরকে কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে ভোট কিনছে। ওই প্রার্থী ওই সব দরিদ্র শ্রেণির লোকদের কাছ থেকে ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে যাচ্ছে, যা ভোট দেয়ার পর ফেরত দিবে বলা হচ্ছে। সে পাশ না করলে আইডি কার্ড ফেরত দেওয়া হবেনা, এও বলা হচ্ছে। এই প্রার্থীর সাথে ভোট কেনার যুদ্ধে অবর্তীণ হয়েছেন আরেক কাউন্সিলর প্রার্থী । সেও প্রতি ভোট বাবদ ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত দিচ্ছে। মনোহরপুর, কান্দিরপাড়, মুন্সেফবাড়ি, দেশওয়ালীপট্রি, উজিড়দীঘির পাড় নিয়ে ১১ নং ওয়ার্ড গঠিত। জানা যায়, এক কাউন্সিলর প্রার্থী গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা ভোট কেনার কাজে খরচ করছেন। তা দেখে অপর এক নতুন প্রার্থীও বসে নেই। সেও এই এলাকার ভোটারদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করছেন। জানা যায়, এ নির্বাচন উপলক্ষে এক কাউন্সিলর প্রার্থী প্রায় ১ কোটি টাকার বাজেট করেছেন যা আজ ও কাল ব্যয় করবেন। অপরদিকে আরেক প্রার্থীও ৭০/৮০ লক্ষ টাকার বাজেট নিয়ে কাজ করছেন। তাদের কর্মকান্ডে অন্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা টেনশনে রয়েছেন। ছোটরা, মফিজাবাদ কলোনি নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডের মফিজাবাদ কলোনিতে রয়েছে প্রায় ৩০০ ভোটার , যারা খুবই দরিদ্র । এই ওয়ার্ডের কিছু কাউন্সিলর প্রার্থীরা টাকার বিনিময়ে ভোট কেনার জন্য এই কলোনীকে বেছে নিয়েছে। সূত্রমতে, এই ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী মফিজাবাদ কলোনিতে প্রতিটি ভোট বাবদ ২/৩ হাজার টাকা করে দিচ্ছে। উত্তর রামপুর, দুর্গাপুর, ঘোষপাড়া, হিরাপুর, মোস্তাপুর, শ্রী বল্লভপুরসহ ১১টি গ্রাম নিয়ে এই ওয়ার্ড গঠিত। সূত্রমতে, এই ওয়ার্ডের এক কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচনী কাজে ইতিমধ্যে ৩০ লক্ষ টাকা খরচ করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে। তিনি এই ওয়ার্ডের ১১টি গ্রামে ১১টি কমিটি করে তাদের মাধ্যমে এলাকার প্রত্যেক ঘরে টাকা বিলি করছেন। অন্য এক কাউন্সিলর প্রার্থীও এই নির্বাচন উপলক্ষে দেড় কোটি টাকার বাজেট করেছেন। তিনিও এগারটি গ্রামে প্রতি ভোট বাবদ ২/৩ হাজার টাকা করে দিচ্ছেন। দক্ষিণ চর্থা, থিরাপুকুরপাড়, বড়পুকুর পাড় এলাকা নিয়ে ১৩ নং ওয়ার্ড গঠিত। এই ওয়ার্ডের আ’লীগপন্থী এক কাউন্সিলর প্রার্থী নির্বাচন উপলক্ষে ৫০ লক্ষ টাকা, বিএনপিপন্থী এক প্রার্থী ৫০ লক্ষ টাকা এবং বিএনপিপন্থী নতুন এক প্রার্থী ১ কোটি টাকার বাজেট করেছেন। তাদের অনেকে নিজেই টাকা বিলি করছেন। আবার কেউ কেউ বিভিন্ন মাধ্যমে টাকা লেনদেন করছেন।
এভাবে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই ভোট কেনার জন্য লক্ষ লক্ষ টাকা অনেক ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছেন কাউন্সিলর প্রার্থীরা। টাকা ব্যয়ের পাশাপাশি এক প্রার্থীর বিরুদ্ধে অপর প্রার্থীর মিথ্যা গুজব ছড়ানোর প্রবণতা অনেক বেড়ে গেছে। আবার একজন আরেকজনকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, নির্বাচনের পর দেখে নেয়ার কথা বলছে ।
সূত্রমতে, আজ প্রত্যেকটি ওয়ার্ডেই ভোট কেনার কাজে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হবে বলে জানা গেছে। একেকটি ভোটের মূল্য ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে সবোর্চ্চ ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। ওই দিন মেয়র প্রার্থীদের ব্যয় একেকজনের ৩০/৪০ কোটি টাকাও ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্র জানায়।