মোঃ শরিফুল আলম, চৌধুরী, মুরাদনগর (কুমিল্লা) থেকেঃ
মুরাদনগরে চলতি সরিষা আবাদের মৌসুমে বাম্পার ফলনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। কুষক – কৃষানীরা স্থানীয় কালি হাইট্রা ও নতুন উদ্ভাবিত বিনা-৭ নামের আগামজাতের আমন ধান কাটার পর বোরো ধান আবাদ করার আগে, এ দুই ফসলের মাধামাঝি সময়ে আরো একটি হারিয়ে যাওয়া নতুন ফসলের আবাদ করাার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় এলাকার কৃষক কৃষানীরা এখন সরিষা আবাদের দিকে ঝুকঁছে। ইতোমধ্যে মাঠে মাঠে এখন ফুলে ফলে ভরা সরিষার হলুদের সমারোহ দেখা যাচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্ষালয় সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা কেমতলী ,কাজিয়াতল, দারোরা, আম্পাল নেয়ামত কান্দি ও শরমাকান্দা এলাকায় ১০৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। উপজেলার কেমতলী গ্রামের কৃষক আবদুল বারেক (৪৮) জানান, এবার তিনি আগাম কালি হাইট্রা জাতের ধান কাটার পর ১০ কাঠা জমিতে জমিতে সরিষা বপন করেছেন। এ সরিষা তোলার পর ওই জমিতেই আবার বোরো ধান আবাদ করবেন। এতে বোরো আবাদের কোন সমস্যা হবে না বলেও জানান তিনি। মধ্যবর্তী সময়ে সরিষার আবাদ হলে জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পাবে, পাঁশাপাশি খাঁটি ও বিশুদ্ধ সরিষার তৈলের চাহিদা, মিটবে। এ গ্রামের মোঃ ওছমান গণি (২১), ১১ কাঠা, মৈধর আলী ১০ কাঠা জমিতে সরিষা বুনেছেন। কৃষকরা জানান, কালি হাইট্রা জতের আমন ধানের সন্ধান পাওয়ার পর এসব এলাকার প্রান্তিক কৃষকরা এখন সরিষার আবাদ করে লাভবান হচ্ছেন। কাজিয়াতল গ্রামের কৃষক হাজী সোলায়মান জানান, তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে একাধারে সরিষার আবাদ করেন, এবার ২ একর ৮ কাঠা জমিতে প্রতি বছরের মতো বিনা-৭ জাতের আগাম ধান কাটার পর সরিষা চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এবার সরিষা বুনার সময় কোন প্রাকৃতিক বিংবা কৃত্রিম দূর্যোগ হয়নি। তার এ আবদ টুকু করতে ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষা তোলার পর আর কোন সমস্যা না হলে এবং বাজারে দর ভাল থাকলে ২০-২৫ হাজার টাকা লাভ হবে।
আমপাল গ্রামের কৃষক জাকির হোসেন (৪০) ইকবাল হোসেন (২৮) জানান, কালি হাইট্রা জাতের আমন ধান কাটার পর সাড়ে ৪ একর জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন তারা, প্রতি বছরই সরিষার আবাদ তুলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময়ে বোরো আবাদ করতে পারেন। এ গ্রামের আবদুল হক ২ একর, আলী আজগর ২ একর ও জামাল হোসেন ৩ একর জমিতে সরিষা বুনেছেন। এলাকাবাসী জানান, আশির দশকের আগে এসব এলাকার সবজমি পতিত পড়ে থাকত। ১৯৮০ সনের দিকে এ জমিগুলোতে গোমতী নদীর পানি দিয়ে সেচের মাধ্যমে বোরো আবাদের আওতায় আসে। বর্তমানে স্থানীয় বোরো আবাদের আগে নতুন করে সরিষারব আবাদের সন্ধান পাওয়ায় এলাকার কৃষকরা এখন সরিষার আবাদের দিকে ঝুঁকছে। কৃষি বিভাগের সহযোগীতা , উৎসাহ ও পরামর্শ পেলে প্রতি বছর এ আবাদের পরিমান আরো বাড়বে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন জানান, মুরাদনগরের মাটি সরিষা আবাদের জন্য খুবই উপযোগী এ বছর ১০৫০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে। এ ছাড়া ও উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগ থেকে কৃষকদের মাঝে বাড়ি ১৪ জাতের ১৯ টি সরিষার প্রদর্শনী প্লট দেয়া হয়েছে। বিনা-৭ ও স্থানীয় কালি হাইট্রা জাতের আমন ধান কাটারপর বোরো আবাদের মাঝখানের নতুন করে এ সরিষা আবাদের দিকে কৃষকেরা এখন ঝুঁকছে। উপজেলা কৃষি বিভাগ ও কৃষক কৃষানীদের মাঝে সব ধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে।