মাসুমুর রহমান মাসুদ, স্টাফ রিপোর্টার :
কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জেনারেল ম্যানেজারের বিরুদ্ধে নজির বিহীন দুর্নীতি ও স্বজন প্রীতির অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডে। বোর্ড চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়, জেনারেল ম্যানেজার মজির উদ্দিন আহম্মদ কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ যোগদানের পর ভালো কর্মকর্তাদের অন্যত্র বদলি করে হয়রানি করেন। সুবিধা ভোগের লক্ষ্যে দুর্নীতিবাজ এজিএম এমএস মনিন্দ্রনাথ কে তার অধীনে কাজ করার সুবাদে বগুড়া পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে বদলি করে কুমিল্লা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এ নিয়ে আসেন। গত দেড় বছরে জিএম মজির উদ্দিন আহম্মদ তার ঘনিষ্ঠ সহচর এবং নিজ এলাকার ই.সি. নজরুল ইসলাম এর নামে প্রায় ২ কোটি টাকার বিভিন্ন কাজের রেফারেন্সে টাকা উত্তোলন করেন, নামমাত্র কাজ করে বিল সমন্বয় করে পুরো টাকা হাতিয়ে নেন এবং উক্ত চেকগুলি ব্যাংকের হিসাবের খাতে জমা না করে প্রতিটি চেক ফ্রী করে ক্যাশ থেকে টাকা উত্তোলন করেন। ওই চেকগুলি ব্যাংকের মাধ্যমে নজরুল ইসলামের নিজ হিসাবে জমা হওয়ার কথা ছিল। মালামাল ক্রয়ের নামেও দুর্নীতি করা হয়েছে। সাধারণ সদস্য সভার স্টেজ, পুকুরের পাড় বাঁধা, পার্ক পুনঃ নির্মাণ করা, আবাসিক ভবনগুলোর ভাল দরজা জানালা, অফিসের চেয়ার খারাপ দেখিয়ে মেরামত করা, জেনারেল ম্যানেজারের গাড়ীর একই যন্ত্রাংশ বারবার পরিবর্তন করার নামে লাখলাখ টাকা দুর্নীতি করা হয়েছে। সমিতির দুইজন ই.সি. থাকলেও ই.সি. নজরুল ইসলামকে দিয়ে পুরো কাজগুলি করিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, পিকনিকের নামে প্রতি কর্মকর্তা-কর্মচারীর হিসাব থেকে এক হাজার টাকা করে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে কেটে নেওয়া হয় এবং আলিকো ইন্স্যুরেন্স কোম্পানীতে বীমা করার জন্য সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে বাধ্য করা হয়েছে। কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী করার ক্ষেত্রেও তার বিরুদ্ধে সীমাহীন দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। সহযোগীদের মাধ্যমে টাকা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেখানে যেতে চান সেখানেই বদলী করেন। সমিতির রেষ্ট হাউজে অতিথিদের আপ্যায়ন বিলেও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। আপ্যায়ন বিল দ্বিগুণ, তিনগুণ দেখিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়।
অভিযোগে আরও উল্লেখ করা হয়, সমিতির সাবেক পরিচালক আঃ খালেক সরকারকে দিয়ে মহামান্য হাইকোর্টে মামলা করে সমিতি বোর্ডের কার্যক্রম বন্ধ রাখেন এবং আর.ই.বি এর সাবেক চেয়ারম্যান ভূইয়া সফিকুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় অঞ্চলের পরিচালক ফায়জা কে হাইকোর্টে দাড় করান। এতে আর.ই.বি ও সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট হয় এবং সেই সময় জেনারেল ম্যানেজার মজির উদ্দিন আহম্মদ ভারত গমন করেন যাতে চেয়ারম্যানের মুখোমুখী হতে না হয়। সমিতি বোর্ড বন্ধ রেখে তিনি খোলাখোলি দুর্নীতি করেন। অফিসের দালাল, ইলেকট্রিশিয়ানরা সারাক্ষণ জেনারেল ম্যানেজারের রুমে যাতায়াত করেন। সমিতি বোর্ড বন্ধ থাকার কারনে এলাকা পরিচালকরা কাজের জন্য গেলে তাদেরকে বলেন বোর্ড চালু হলে আপনারা আসেন এখন আসবেন না। এলাকা পরিচালকদের জিজ্ঞাসাবাদ করলে জেনারেল ম্যানেজারের দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র উঠে আসবে।
সমিতির ডিপোজিট ওয়ার্কের কাজের সীট অনুমোদনের জন্য প্রতিটি সীটে ৫ হাজার টাকা করে ঘুষ নিয়ে থাকেন। না দিলে অনুমোদন করেন না। আর.ই সেকশন থেকে তার চুক্তিকৃত আবেদনগুলি নেওয়ার জন্য নিজ হাতে লেখা টোকেন দেন এবং লাইন নির্মাণের ঠিকাদারকে সীট ইস্যুর জন্য এ.জি.এম প্রকৌশলীকে সিরিয়াল ভঙ্গ করে কাজ করার জন্য জেনারেল ম্যানেজার টোকেন দেন। টোকেনে বিভিন্ন ভিআইপি লোকের নাম লেখেন।
সরকারি বরাদ্দ প্রাপ্ত লাইন নির্মাণের জন্য মাস্টার প্লানের সিরিয়াল অনুযায়ী করার কথা থাকলেও তা নির্দিষ্ট দালাল চক্র দিয়ে এম.পি মহোদয়ের কাছ থেকে সুপারিশ নিয়ে আসনে। সেই সুপারিশ অনুযায়ী সীট তৈরী করেন। বিতর্কিত বিলিং সহকারী শিরীন সুলতানা দিপা কে দেবিদ্বার অফিস থেকে বদলী করে চান্দিনা সদর অফিসে নিয়ে আসনে। অফিসের ষ্টেশনারী মালামাল জেনারেল ম্যানেজার তার আত্মীয় সাজ্জাদ নামের এক ঠিকাদারকে দিয়ে কিনে থাকেন।
গত ১৮ ডিসেম্বর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর দায়েরকৃত ওই লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জেনারেল ম্যানেজারের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে আছেন। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে বদলী করেদেন। নিরাপত্তার সার্থে ওই অভিযোগ পত্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়।