মৃত্যুর ৫৩ দিন পর মৃত যুবককে জীবিত করার চেষ্টা :কবর থেকে লাশ তুলতে গিয়ে ৫ জন গ্রেফতার

আরিফুল ইসলাম সুমন, নাসিরনগর থেকে ফিরে :

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল নূরপুর গ্রামে কথিত এক শিশু কবিরাজের নির্দেশে মৃত্যুর ৫৩ দিন পর কবর থেকে লাশ তোলার সময়ে কবিরাজসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে ঘটনাটি ঘটেছে।

সরেজমিন জানা যায়, নুরপুর গ্রামের কৃষক জিনু মিয়ার পালক পুত্র জিয়াউল হক(২৪) গত ১০ অক্টোবর মাধবপুর উপজেলার মনতলা গ্রামে মামার বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মারা যায়। পরে তার লাশ নুরপুর গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। যুবকের মৃত্যুর কিছুদিন পর মামী জোসনা বেগম রাতে স্বপ্ন দেখতে পান জিয়াউল কবরে জীবিত এবং তাকে উঠিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। জোসনা বেগম বিষয়টি ওই যুবকের স্বজনদের জানান। ঘটনাটি জানতে পারে জেলার নবীনগর উপজেলার ছলিমগঞ্জ গ্রামের মাসুক মিয়ার পুত্র কথিত শিশু কবিরাজ আহাম্মদ আলী রিপন (১২)। শিশু কবিরাজের দাদী সুফিয়া খাতুন (৫০) মৃত যুবকের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কবর থেকে লাশ তুলে ঝাড়-ফুকের মাধ্যমে মৃত যুবককে জীবিত করবেন। বিনিময়ে তারা মোটা অঙ্কের অর্থ দাবি করে। সন্তানহারা পিতা-মাতা এতে রাজি হয়ে যান।

গতকাল বৃহস্পতিবার কথিত ওই শিশু কবিরাজ ও তার সহযোগিরা নুরপুর গ্রামের কবরস্থান থেকে মৃত্যুর ৫৩ দিন পর যুবকের লাশ তোলার অনুমতি চান স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানের কাছে। এতে চেয়ারম্যান আপত্তি জানান। এসময় তারা উত্তেজিত হয়ে কবর খুঁড়তে শুরু করে। এ দৃশ্য দেখতে গ্রামের তিন সহ¯্রাধিক জনতা ভীড় জমান। কবরের পাশে রাখা হয় কলাগাছসহ খাটিয়া। কবরের ছাটাই ও বাঁশ উত্তোলনের পর দেখা যায় লাশে পঁচন ধরে গেছে। কবিরাজ তখন লাশ উত্তোলন না করে কবর বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়। এসময় আচমকা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় নাসিরনগর থানা পুলিশ। তারা কথিত শিশু কবিরাজ আহাম্মদ আলী রিপন, তার প্রধান সহযোগি প্রতারক দাদী সুফিয়া বেগম, মৃত যুবকের মামী জোসনা বেগম, চাচা মিনু মিয়া ও গ্রামের বাসিন্দা তোতা মিয়াকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যান। গ্রেফতারের পর স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও পরে তা শান্ত হয়।

এ ব্যাপারে গ্রেফতারকৃত শিশু কবিরাজ জানায়, লাশটি পঁচে যাওয়ায় ভালো করা সম্ভব হয়নি। এমন কয়েকটি রোগী আমি অতীতে ভালো করেছি। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম এ হান্নান বলেন, মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করার কথা কখনো শুনেনি। এটি অবিশ্বাস্য ঘটনা। তারা প্রতারক।

নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম ফারুক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আটক ৫জনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Check Also

আশুগঞ্জে সাজাপ্রাপ্ত আসামির মরদেহ উদ্ধার

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি :– ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মো. হারুন মিয়া (৪৫) নামে দুই বছরের সাজাপ্রাপ্ত এক আসামির ...

Leave a Reply