চিকিৎসক জনবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে দীর্ঘ দিনেও চালু হয়নি ৩টি অপারেশন থিয়েটার!
জামাল উদ্দিন স্বপন:
লাকসামের সাড়ে ৩ লাখ লোকের একমাত্র ভরসা এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ২০০৯ সালের ২৬শে ফেব্র“য়ারি ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। জনবলসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করায় অন্তহীন সমস্যায় হাবুডুবু খাচ্ছে চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসক ও নার্স সংকটে গুটিকয়েক ডাক্তার-নার্স রোগীর চাপে হাঁপিয়ে উঠছেন। তাদের পক্ষে যথাযথ চিকিৎসা সেবা দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। যারা কর্মরত আছেন তারাও নিয়মিত কর্মস্থলে থাকছেন না। গত সোমবার সকাল সাড়ে ১০টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালে রোগীদের উপচেপড়া ভীড়। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কমকর্তা, আরএমও, ২ জন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার এবং জরুরী বিভাগের একজন ডাক্তার ছাড়া কোনো চিকিৎসককে দেখা যায়নি।
জানা যায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ চিকিৎসা কর্মকর্তার ২৭টি পদের মধ্যে ১১টিই শূন্য। এখানে ৯ জন চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ থাকলেও আছে মাত্র ৩ জন। মেডিসিন, গাইনি, এনস্থেশিয়া, এমসি, চর্ম ও যৌন রোগ, চক্ষু, অর্থপেডিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদগুলোও শূন্য রয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (এমও এনস্থেশিয়া), বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (এমও ভেষজ), বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক (চর্ম ও যৌন) পদে রয়েছেন সাধারণ ডাক্তার। এছাড়া, প্রেষণে রয়েছেন নাক, কান, গলা ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। সূত্র জানায়, সহকারী সার্জনের ৫টি পদের মধ্যে ৪টি পদই শূন্য। ফার্মাসিষ্টের ৩টি পদ থাকলেও গত ৪ বছর ধরে ২টি শূন্য রয়েছে। ল্যাবরেটরী এটেনডেন্ট, অপারেশন থিয়েটার এটেনডেন্ট ও ক্যাশিয়ারের পদও রয়েছে শূন্য। সেবিকার (নার্স) ১৫টি পদের মধ্যে ৫টি এবং স্বাস্থ্য সহকারীর ২৮টি পদের মধ্যে ৭টি পদই শূন্য রয়েছে। হাসপাতালের অফিস সহকারীর ৩টি পদের মধ্যে সবগুলো শূন্য। ওয়ার্ড বয়ের ৩টি পদের মধ্যে ২টি, এমএলএসএস’র ৪টি পদের মধ্যে ২টি, এবং ঝাড়–দারের ৫টি পদের মধ্যে ৩টিসহ মশালচির পদটিও শূন্য রয়েছে।
হাসপাতালের দু’টি এক্স-রে মেশিনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ অকেজো। অপরটি সচল থাকলেও সব ধরনের এক্স-রে করা যায় না। সামান্য বৃষ্টিতেই এক্স-রে কক্ষের ছাদ চুয়ে পানি পড়ে। অপারেশন থিয়েটার (ওটি) কক্ষেরও একই অবস্থা।
লাকসামে ৫টি উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিটিতে একজন চিকিৎসা কর্মকর্তা এবং একজন সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তার পদ রয়েছে। কিন্তু চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় সহকারী চিকিৎসা কর্মকর্তা দিয়ে সেগুলো চালানো হচ্ছে। যার ফলে একদিকে যেমন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দৈনন্দিন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে, অপরদিকে প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে এসে অনেক রোগী ফিরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
কুমিলা¬ জেলা সিভিল সার্জন ডা. আবুল কালাম আজাদ সিদ্দিক এ বিষয়ে বলেন, জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে অবহিত করা হয়েছে। অচিরেই সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।
এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আবুল হাসেম আনসারী জানান, চিকিৎসক, নার্সসহ জনবল এবং বিভিন্ন সমস্যার কারণে রোগীদের সঠিক সেবা দেয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। জনবলসহ নানা সমস্যার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিয়মিত অবহিত করা হচ্ছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।
তাছাড়া, পার্শ্ববর্তী মনোহরগঞ্জ এবং কুমিলা¬ সদর দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চালু না হওয়ায় এখানে রোগীদের অতিরিক্ত চাপ পড়ে। অপরদিকে, লাকসাম রেলওয়ে জংশন দিয়ে যাতায়াতকারী চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা রুটের বিভিন্ন ট্রেন এবং কুমিল্লা-নোয়াখালী, কুমিল্লা-চাঁদপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দুর্ঘটনাকবলিত যাত্রীদের চিকিৎসার চাপও সামলাতে হয়।