দেবিদ্বারে শিশু অপহরণকালে আটক হাতকরা পরিহীত আসামী পুলিশকে লাথি মেরে পলায়ন ! এলাকায় তোলপাড়

মোঃ ফখরুল ইসলাম সাগর, দেবিদ্বার (কুমিল্লা) সংবাদদাতাঃ

অপহরণকারী জামাল
দেবিদ্বার থানা পুলিশের হাত থেকে হাতকরা পরিহীত মুরাদনগর উপজেলার মোচাগড়া গ্রামের মোঃ আবুল কাসেমের পুত্র মোঃ জামাল আহমেদ(১৮) নামে এক শিশু অপহরণকারী পুলিশকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে পলায়নকে কেন্দ্র করে দেবিদ্বার উপজেলা সদরে তুলকালাম কান্ড ঘটেছে। রাতভর পুলিশের শ্বাসরুদ্ধকর অভিযানে পুনঃরায় নাটকীয়ভাবে গ্রেফতারের পর পুলিশের স্বস্তিঃ ফিরে এসেছে।

শুক্রবার রাতে অপহীত উপজেলার ‘চরবাকর ন্যাশনাল কিন্ডার গার্ডেন স্কুল’র প্রথম শ্রেণীর ছাত্র তানভির আনজুম রনি (৮)র খালাতো ভাই ফতেহাবাদ গ্রামের মোঃ আজিজুল হকের পুত্র মোঃ সাকিল আহমেদ বাদী হয়ে অপহরণকারী জামালকে অভিযুক্ত করে দেবিদ্বার থানায় একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন।

শনিবার বিকেলে কুমিল্লা ৪নং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেটের আদালতে অপহরণকারী জামালকে হাজির করা হলে ম্যাজিষ্ট্রেট একেএম কামাল উদ্দিন’র নিকট ১৬৪ ধারায় জবান বন্দিতে মুক্তিপন আদায়ের দাবীতে তানভিরকে অপহরণের চেষ্টা করেছিল বলে স্বীকার করেছে। তানভির মুরাদনগর উপজেলার পরমতলা গ্রামের আবুল কাসেমের পুত্র। সে তার মামা দেবিদ্বার আওয়ামী ওলামালীগের সভাপতি ও চরবাকর মাদ্রাসার প্রভাষক মাওলানা মোঃ শাহআলমের বাড়ি চরবাকর গ্রামে থেকে লেখাপড়া করছিল।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার বিকেলে দেবিদ্বার উপজেলার চরবাকর গ্রামের ‘চরবাকর ন্যাশনাল কিন্ডার গার্ডেন স্কুল’র প্রথম শ্রেণীর ছাত্র তানভির আনজুম রনি(৮)কে তার খেলার সাথীদের কাছ থেকে জামাল আহমেদ(১৮) নামে এক অপহরণকারী কৌশলে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে যায়। সিএনজি চালিত অটোরিক্সা যোগে ভিড়াল্লা বাস স্টেশনে আসার পর মোবাইল ফোনের আলাপচারিতায় সন্দেহ হলে সিএনজি চালক চরবাকর গ্রামের জামাল হোসেন সরকারের সহযোগীতায় স্থানীয়দের হাতে অপহীতসহ অপহরণকারী আটক হয়।

সংবাদ পেয়ে দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু জাহের তিনজন পুলিশ কনষ্টেবল নিয়ে অপহরণকারীকে উদ্ধার করেন এবং অপহীত শিশুটিকে তার অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করে আসামী নিয়ে সিএনজি যোগে চলে আসেন।

একই পুলিশ পথিমধ্যে দেবিদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় প্রকাশ্য দিবালোকে ‘আল ইসলাম হাসপাতাল’র পরিচালক কামরুল হাসান বাচ্চুর বাসায় গ্রীল কেটে চুরির ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যান। সন্ধ্যা ৭টায় এসআই আবু জাহের দু’জন পুলিশ কনষ্টেবল নিয়ে চুরির ঘটনাস্থলে গেলেও অপর কনষ্টেবল ইব্রাহীমকে আসামীর সাথে সিএনজিতে রেখে যান। দু’হাতে হাতকরা পরিহীত সুযোগ সন্ধানী আসামী জামাল সুযোগ বুঝে কনষ্টেবল ইব্রাহীমকে লাথি মেরে ফেলে দিয়ে পালিয়ে যায়। ওই ঘটনায় উপজেলা সদরে তোলপাড় চলতে থাকে। রাত সাড়ে ১২টায় সিএনজি চালক আরিফ(২২) জামালকে দেবিদ্বার নিউমার্কেট এলাকায় দেখতে পেয়ে আটক করে পুলিশকে খবর দেয়। আসামীর হাতে হাতকরা না থাকায় জিজ্ঞাসাবাদে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। তাকে নিয়ে অভিযান চালিয়ে দেবিদ্বার নিউমার্কেট এলাকার সৌদী প্রবাসী নুরুমিয়ার বাসা থেকে হাতকরা দুটি উদ্ধার করেন।

ওই বাসার গৃহকত্রী মিসেস নুরু বেগম জানান, ছেলেটি অল্পবয়সের, হাতকরা পরিহীত অবস্থায় আমার বাসায় ঢুকে পড়ে। কান্নাবিজড়িত কন্ঠে জানায় সে মিথ্যে ষড়যন্ত্রের শিকার, তার হাতকরা খুলে দিতে। আমার ছেলের কথা ভেবে মায়া হল, তাই হাতুরী দিয়ে হাতকরা খুলে দেই এবং ভাত খাওয়ায়ে একশত টাকা দিয়ে আমার সেল ফোনের নম্বর দিয়ে বিদায় করে দেই। অসচেতনতার কারনে বিরাট ক্ষতি করে ফেলেছিলাম, যা পরে বুঝতে পেরেছি।

অপহীত তানভির জানায়, খেলার সময় আমার বন্ধুদের কাছ থেকে বিভিন্ন কথা বলে ওই ছেলেটি আমাকে নিয়ে আসে। একটি সিএনজিতে উঠে মোবাইল ফোনে কসবা উপজেলার মাধবপুর এক মহিলার সাথে কথা বলে। এসময় আমার পরিচিত সিএনজি চালক বুঝতে পেরে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে আমি তাকে চিনিনা বললে স্থানীয় লোকদেও সহযোগীতায় তাকে আটক করে।

অপহরনকারী জামাল জানান, আমি তাকে অপহরণ করে ২০/২৫ হাজার টাকা মুক্তিপণ দাবী করতাম, তবে টাকা না দিলে তাকে হত্যা না করে ছেড়ে দিতাম।

মামলা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবিদ্বার থানার উপ-পরিদর্শক(এসআই) আবু জাহের জানান, অপহনকারী একা নয়, তার সাথে একটি বড় আন্তঃজেলা চক্র রয়েছে। তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে পুরো চক্রটিকে আটক করা হবে।

Check Also

নিউইয়র্কের চিকিৎসক ফেরদৌস খন্দকারে দেওয়া খাদ্য পাচ্ছে দেবিদ্বারের ১ হাজার পরিবার

দেবিদ্বার প্রতিনিধিঃ করোনা ভাইরাস পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারনে কর্ম হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছে দেশের হাজার হাজার ...

Leave a Reply