আরিফুল ইসলাম সুমন ॥
ভালোবেসেই হাছানকে বিয়ে করেছিল বেবী। স্বপ্ন ছিল সুখের সংসার গড়ার। বিয়ের মাত্র ছয় দিনের মাথায় হাছান আভির্ভূত হলো অন্য চেহারায়। যৌতুকের জন্য মারধর করল বেবীকে। অনন্যোপায় নববধূ বেবী এখন দিশেহারা। বিধবা মা তাকে রাত জেগে পাহারা দেয়, কখন মেয়ে আত্মহত্যা করে বসে।
ঘটনাটি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদাপুর ইউনিয়নের দেওড়া গ্রামের। পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দিতে না পারায় নববধূ বেবীর কপাল পুড়েছে। এখন তার ঠাঁয় বাবার বাড়িতে। বিচার পেতে বেবী আশ্রয় নিয়েছে থানা পুলিশের।
মামলা সূত্র ও নববধূর পরিবারের লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, উপজেলার দেওড়া গ্রামের মৃত ফুল মিয়ার কন্যা মনোয়ার পারভীন বেবী (২৭)। স্কুল জীবন থেকেই ভালোবাসত একই গ্রামের মৃত কদর আলীর পুত্র হাছানকে (৩০)। সম্প্রতি হাছান প্রবাস থেকে দেশে ফিরলে অনেক নাটকীয়তার পর গত ১০ নভেম্বর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের সময়ে বরের পরিবারের লোকজন চাপ দিয়ে কনের বিধবা মাতার কাছ থেকে তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার, ফার্নিচার বাবদ নগদ এক লাখ টাকা ও মটরসাইকেলের জন্য এক লাখ ৫০ হাজার টাকা যৌতুক আদায় করে নেন।
বিয়ের ২/৩ দিন পর স্বামী হাছান আলী বাড়িতে বিল্ডিং ঘর নির্মাণ করার জন্য স্ত্রীর কাছে আরও পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। নববধূ বেবী তার বিধবা মায়ের অসহায়ত্বের কথা জানিয়ে অপরাগতা প্রকাশ করেন। এতে স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। অবশেষে গত ১৬ নভেম্বর বিকেলে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক এনে দিতে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নববধূকে চাপ সৃষ্টি করে। এতে বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে হাছান আলী স্ত্রী বেবীকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যার চেষ্টা চালায়। এসময় ভাসুর মেহের আলী, ননরী চন্দনা বেগম, শ্বাশুড়ি মেহেরুন বেগম ও ননরী চন্দনার স্বামী হাবিব মিয়া নববধূকে বেধড়ক মারপিট করে। সুর-চিৎকার শুনে প্রতিবেশী লোকজন এগিয়ে এসে তাদের কবল থেকে নববধূকে রক্ষা করে। বেবী পুরো বিষয়টি মুঠোফোনে তার মাকে জানায়। নববধূর মাতা জোসনা বেগম মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে এলে বাড়ির লোকজন তার ওপর চড়াও হয়। তখন হাছান সাফ জানিয়ে দেন আরও পাঁচ লাখ টাকা না দিলে বেবীকে নিয়ে সে সংসার করবে না। জোসনা বেগমের আকুতি-মিনতি কোনো কাজে আসেনি। এক কাপড়ে নববধূ বেবীকে তার মায়ের সাথে বের করে দেয়। আহত নববধূ সরাইল হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
শনিবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে বেবী জানায়, এখন সে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। মাঝে মাঝেই তার মনে হয় পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে।
বেবীর মা জোসনা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। কখন কি করে বসে এ নিয়ে খুব ভয় হয়। আমার স্বামী নেই, সংসারে তিন মেয়ে। এখন বুঝতে পারছি না কি করা উচিত।
এ বিষয়ে জানতে হাছান আলীর বাড়িতে গেলে কাউকে পাওয়া যায়নি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সরাইল থানার এস আই সফিকুল ইসলাম জানান, যৌতুকের জন্য নববধূকে নির্যাতনের ঘটনায় থানায় নিয়মিত মামলা রুজু হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করা হচ্ছে। আসামিরা পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।