কুমিল্লা সংবাদদাতা:
কুমিল্লার সদর দক্ষিন উপজেলার ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের শিকারপুর এলাকায় দু’যুবকের উপস্থিত বুদ্ধিতে দূর্ঘটনার হাত থেকে বেচে গেছে একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। গতকাল সকাল পৌনে ৮টায় রাকিবুল (১৯) ও বধির সুমন (২০) নামের দু’যুবক ভাংগা রেলপথের সামনে একটি লাল স্যুয়েটার উড়িয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেয়।
যেভাবে দূর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেল ট্রেনঃ
জেলার সদর দক্ষিন উপজেলার বারপারা ইউনিয়নের চাদপুর গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র রাকিবুল ও আত্বীয় সম্পর্কে চাচা একই গ্রামের আব্দুর রশিদের পুত্র সুমন (বধির) গতকাল শনিবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় ১কিলোমিটার দুরে শিকারপুর এলাকায় ঢাকা ঢাকা-চট্রগ্রাম রেলপথের পাশে ফসলী জমির পাশে নিজস্ব পুকুরের মাছ দেখতে যায়। এসময় তারা দু’জন রেলপথের প্রায় ৮/৯ ইঞ্চি অংশ ভাংগা দেখে।
লাল স্যূয়েটার উড়িয়ে ট্রেন থামালো যেভাবেঃ
রাকিবুল জানায়, রেলপথ পাড় হওয়ার সময় দেখে রেলপথের একটি অংশ ভাংগা। এ অবস্থায় তার মাথায় আসে ট্রেন আসলে দূর্ঘটনা নিশ্চিত। তখন সে লাল কাপর খুজতে থাকে। এক পর্যায়ে দেখে জমিতে কৃষি কাজে ব্যস্ত এক মজুরের গায়ে লাল স্যূয়েটার। তখন তাকে সেটি দেয়ার জন্য অনুরোধ করে। প্রথমে দিতে রাজী না হলেও একপর্যায়ে সে এটি খুলে দেয়। তখন রাকিবুল ও সুমন দৌড়ে আবার রেলপথের উপরে এসে ভাংগা অংশ থেকে প্রায় ৫০ মিটার সামনে ধাবমান ট্রেনটির দিকে এগিয়ে গিয়ে স্যূয়েটারটি ওড়াতে থাকে এবং ট্রেনের চালকের দৃষ্টি আকর্ষনের জন্য চিৎকার করে দু’হাত তুলে। একপর্যায়ে চালক বিষয়টি দেখে ভাংগা অংশ থেকে প্রায় ৩০/৩৫ গজ দুরে ট্রেনটি থামিয়ে দেয়।
লাল পতাকা ও ট্রেন থামানোঃ
রাকিবুল জানায় আমাদের এলাকার শিকারপুরে প্রায় ৩বছর পূর্বে এমনই ভাবে রেলপথে ভাংগা অংশ দেখে এক ছেলে লাল শার্ট খুলে সেটি উড়িয়ে ট্রেন থামিয়ে ছিল। সে বিষয়টি মাথায় রেখে আমি এ কাজটি করি। বধির সুমন কোন কথা না বলতে পারলেও সঙ্গী রাকিবুল জানান, ট্রেনটি থামার পর চালক ট্রেন থেকে নেমে আসে এবং রেলপথের ভাংগা অংশ দেখে তার এই ভূমিকার জন্য প্রশংসা করে। এসময় ট্রেন থেকে বহু যাত্রী নেমে বাস ও অন্যান্য যানবাহন যোগে গন্তব্যে চলে যায়।
রেলওয়ের বক্তব্যঃ
রেলওয়ের সাব এসিসটেন্ট ইন্জিনিয়ার (ওয়ে) ও এ ই এন (চলতি দায়িত্ব) হামিদুল হক জানান, রেলপথের যে পরিমান অংশ ভাঙ্গা ছিল তা দিয়ে অনায়াসে রেলচলাচল করতে পারে। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই রেলপথের এই অংশটির দেখার জন্য দায়িত্বে ছিলেন মমিন নামের একজন কর্মচারী। তিনি সকালে ভাঙ্গা অংশটি দেখে মেরামতের জন্য পদুয়ার বাজার রেলক্রসিং এ এসে ভাঙ্গা অংশে ফিশ প্লেট লাগানোর জন্য তা সংগ্রহ করে ফেরার পথেই শোনেন জনতা কাপড় উড়িয়ে লাকসাম থেকে আখাউড়াগামী চাদপর লোকালট্রেনটি থামিয়ে দেয়। এসময় আমিও খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। ৭/৮ ইঞ্চি ভাংগা অংশ দিয়ে অনায়াসে রেল চলাচল করতে পারে দাবী করে তিনি আরো বলেন, পরবর্তীতে ভাঙ্গা অংশের উপর দিয়েই বেশ ক’টি আন্ত:নগর ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করেছে। বিকাল ৩টা নাগাদ ওই ভাঙ্গা অংশের মেরামতের কাজ শেষ হয়।