লাকসাম হাউজিং এষ্টেটের ভূমি বরাদ্ধে জালিয়াতির গোপন তথ্য ফাঁস

আব্দুর রহিম :
লাকসাম হাউজিং এষ্টেটের ৩ শতক ভূমি বরাদ্দ দেয়াকে কেন্দ্র করে সর্বত্রে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বর্তমান বাজার মূল্য প্রায় ৬০ লাখ টাকার ভূমি মাত্র ৪ লাখ ৬২ হাজার ৭ শত ৯২ টাকায় রেজিষ্ট্রি করে দিয়েছে লাকসাম উপজেলা চেয়ারম্যান এবং হাউজিং এষ্টেট কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব মজির আহমদ। লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসের কর্মচারী শাহ আলমকে ওই ভূমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। উক্ত ভূমিটি এ অফিসের সাবেক কর্মচারী লালমিয়াকে দেয়ার সিদ্ধান্ত (রেজুলেশন) ছিলো হাউজিং এষ্টেট কমিটির। ৬ অক্টোবর ১৯৯৯ইং সালে উক্ত ভূমিটি পাওয়ার জন্য লালমিয়া আবেদন করেন। ৯ অক্টোবর ১৯৯৯ইং সালে হাউজিং এষ্টেট কমিটির ৮৩নং সভায় সর্বসম্মতি ক্রমে ভূমিটি লাল মিয়াকে দেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়ে একটি রেজুলেশন হয়। ওই রেজুলেশন দীর্ঘদিন যাবৎ কার্যকর অথবা বাতিল না করে অবৈধ ভাবে ভূমিটি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে বলে লালমিয়া অভিযোগ করেছেন। উপজেলা চেয়ারম্যান ও হাউজিং কমিটির সভাপতি মজির আহমদ জানিয়েছেন কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক শাহ আলমকে ভূমিটি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। কিন্তু শাহ আলম জানিয়েছেন ভিন্ন খবর। এ ব্যাপারে শাহ আলমের ০১৮১৯-৯২৯৫০৯ নাম্বার মোবাইলে আলাপ করলে তিনি বলেন, জায়গাটি লাকসামের সাবেক ইউএনও এ.কে.এম মামুনুর রশিদ আমার নামে দলিল সুষ্টি করিয়েছেন। আমি বাহক মাত্র। জায়গাটি আমার কাছে থাকবেনা। শ্রীঘ্রই স্যার (মামুনুর রশিদের) নামে চলে যাবে। সকল টাকা মামুন স্যার দিয়েছেন। শাহ আলম আরো বলেন মামুন স্যারের নামে লাকসাম পৌর এলাকায় আরো জায়গা রয়েছে বিধায় এ জায়গাটি তিনি আমার নামে ক্রয় করেছেন। মামুনুর রশিদ বর্তমানে কুমিল্লা ক্যান্টমেন্ট বোর্ডের এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত আছেন। মামুনুর রশিদের ০১৭১২-১২৭৪৫৭ নং মোবাইলে ফোন দিলে তিনি বলেন- লাকসাম পৌর এলাকায় আমার নামে কোন সম্পত্তি নেই এবং যে বিষয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তাহা মিথ্যা। লাকসামের বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানী উপঢোকন হিসেবে লাকসামের বিভিন্ন স্থানে প্লট/ফ্ল্যাট দিয়েছে বলে সুত্র জানিয়েছে। জানা গেছে ১ মার্চ ২০১১ইং তারিখে লাকসাম ইউএনও অফিসের কর্মচারী শাহ আলম হাউজিং ষ্টেটে বসবাসের জন্য প্লট চেয়ে আবেদন করেন। ১২ মার্চ উপজেলা চেয়ারম্যান ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ইউএনওকে নির্দেশ দেন। ১৩ মার্চ ইউএনও তাহা গ্রহন করেন। ২০ মার্চ হাউজিং কমিটির মিটিং ডাকেন ইউএনও। ২৪ মার্চ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে মিটিং ব্যতিত একটি রেজুলেশন সৃষ্টি করেন, উক্ত রেজুলেশনের লেখা অনুযায়ী জানা যায়, ইউএনও প্রস্তাব করেন শাহ আলমকে হাউজিং ষ্টেটের ৩ শতক ভূমি বরাদ্দ দেয়া হোক। সভায় প্রস্তাব গৃহীত হয়। শুরু হয় দলিল সম্পাদনের প্রক্রিয়া। ১৮ এপ্রিল হাউজিং এষ্টেট এলাকার মূল্য জান্তে চেয়ে সাবরেজিষ্টারকে ০৫, ৫৫২, ০০২, ০০, ০০, ০৩২, ২০১১-৩২৭ নং স্মারকে চিঠি দেন ইউএনও একেএম মামুনর রশিদ। ১৯ এপ্রিল সাবরেজিষ্টার ইউএনও বরাবরে হাউজিং এলাকার মুল্য তালিকা ১০০নং স্মারকের মাধ্যমে পাঠান। ৩১ অক্টোবর সাব রেজিষ্টারকে চিঠি দিয়ে শাহ আলমের নামে হাউজিং ষ্টেট প্রকল্পর আর.এস ৪৩৭, বি.এস ৭৯৮ দাগের ৩ শতক ভূমি দলিল সম্পাদনের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য ০৫, ৫৫২, ০০৮, ০০, ০০, ০০, ০০৫, ২০১১-২৩নং স্মারকে মাধ্যমে অনুরোধ জানান উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজির আহমদ এবং ওই দিনই দলিলটি রেজিষ্ট্রি হয়।

সূত্র জানিয়েছে ৮৭ সালে লাকসাম হাউজিং ষ্টেট হওয়ার পর প্লট বরাদ্ধ দেয়া হয়। তারপর টুক টাক যে সব জায়গা খালি ছিলো বা আছে তার মধ্যে সৃজিত দলিলে উল্লেখিত দাগ বি.এস রেকের্ডে নাই। নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাউজিং কমিটির একজন সদস্য জানান,্ উদ্দেশ্য প্রনোদিত ভাবে এ জায়গাটি বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। বর্তমান মালিক শাহ-আলম ভূমিটি হস্তান্তর করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করে জানতে পারেন খারিজ ব্যতিত কোন হস্তান্তর হবেনা তাই খারিজের জন্য আবেদন করলে গত ২৪ নভেম্বর আবেদনের পেক্ষিতে শুনানি অনুষ্ঠিত না হওয়ার পর ও গোপনীয়ভাবে খারিজ করা হয়। উক্ত খারিজের বিরুদ্ধে লাল মিয়া বাদী হয়ে অভিযোগ দায়ের করলেও অতি গোপনে খারিজের কাজ সম্পাদন করায় বিষয়টি বর্তমানে টক অবদি লাকসামে পরিণত হয়েছে। বিজ্ঞ মহল ধারনা করছেন সাবেক ইউএনও ক্ষমতার অপব্যবহার করে উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মজির আহমদকে ম্যানেজ করে এসব দুর্নীতি ও জালিয়াতী করে ৬০ লাখ টাকার সম্পত্তি নাম মাত্র মূল্য দিয়ে সু-কৌশলে কুক্ষিগত করার পায়তারা করছেন। এই ইউএনও অফিসের কর্মচারী শাহ আলম জানান আমি এই সম্পত্তি বাহক মাত্র মামুন স্যারকে সহসায় সম্পত্তি বুঝিয়ে দিব।

Check Also

লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপি’র সাবেক এমপি আলমগীরের জাতীয় পার্টিতে যোগদান

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ– কুমিল্লা-১০ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) বিএনপি’র সাবেক এমপি এটিএম আলমগীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন। সোমবার জাতীয় ...

Leave a Reply