কুসিক নির্বাচন : আ’লীগে মনোনয়ন প্রত্যাশী হাফডজন প্রার্থীর রাজনৈতিক অবস্থান

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, কুমিল্লা:

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের তফসীল ঘোষনা হয়েছে ২২ নভেম্বর ২০১১। মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১১। যাচাই-বাছাই ৪ ও ৫ ডিসেম্বর। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৪ ডিসেম্বর। দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আ’লীগ ও বিএনপি এখনো প্রার্থীপদ চূড়ান্ত ঘোষনা না করলেও জাতীয়পার্টি ও জামায়াত থেকে একজন করে প্রার্থী নির্বাচনী প্রচারনা চালাচ্ছেন। ইভিএম ও সেনা মোতায়নের দাবী তুলে বর্তমানে বিএনপি প্রার্থীরা প্রকাশ্যে গনসংযোগে না থাকা এবং সির্দ্ধান্ত বা দাবী না মানলে নির্বাচন বর্জনের ঘোষনায় চিন্তিত নগরবাসী। তবে এখন পযর্ন্ত আ’লীগ থেকে দলীয়প্রার্থী হিসেবে কারো নাম প্রকাশ্যে ঘোষনা না করায় নির্বাচনী প্রচারনায় ৬জন প্রার্থীই কোন না কোন ভাবে গনসংযোগ বা নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে সবার মুখে মুখেই ফিরছে দীর্ঘ অর্ধশতাব্দী ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় কুমিল্লা (দঃ) জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক অধ্য আফজাল খানের নাম। গত ২০নভেম্বর সংসদ ভবনে মাগরিবের নামাজের বিরতীকালে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আ’লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক সাবেক আইনমন্ত্রী আব্দল মতিন খসরুকে আফজাল খানের পে কাজ করার ঘোষনা নগরীতে জানাজনি হলেও দলের অন্যান্য মনোনয়ন প্রত্যাশিরা বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না। তারা এখনো স্বাভাবিক গতিতে তাদের গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ মূহুর্তে তাদের বক্তব্য তারা নির্বাচনী মাঠ ছাড়ছেন না।

নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশি আ’লীগ নেতাদের বিগত সময়ের রাজনৈতিক অবস্থান

অধ্যক্ষ আফজাল খান

জেলা আ’লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক তিনি ১৯৪৫ সালের ১০ফেব্র“য়ারী জন্ম। ১৯৬০সালের প্রথম দিকে ছাত্রলীগের রাজনীতের সাথে জড়িত হন। ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ভিপি নির্বাচিত। ১৯৬৬ সালে ৬দফা,১৯৬৯সালের গনঅভ্যূথ্থান,১৯৭০সালের নির্বাচনে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় সক্রিয় নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১সালে মহান মুক্তিযুদ্ধেও সংগঠক হিসাবে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন। স্বাধীনতার পর প্রথম নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান কুমিল্লা পৌরসভার। সাবেক সভাপতি বাংলাদেশ সমবায় ইউনিয়ন,পরিচালক ফেডরেশন অব চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি,আদর্শ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান,সভাপতি কুমিল্লা চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি,সহ-সভাপতি কুমিল্লা জেলা ক্রীড়া সংস্থা,সভাপতি জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি,নির্বাচিত সভাপতি বাংলাদেশ সমবায় ব্যাংক লিঃ ঢাকা,বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান কুমিল্লা রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি,সভাপতি ল্যান্ড মরগেজ ব্যাংক কুমিল্লাসহ বিভিন্ন সময়ে আরো অনেক দায়িত্বশীল পদে দায়িত্বপালন। সমবায় আন্দোলনে অবদানের স্বীকৃতি স্বরুপ প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক শ্রেষ্ট সমবায়ী হিসেবে স্বর্নপদক পেয়েছেন তিনি। অধ্যক্ষ আফজাল খানের অন্য একটি পরিচিতি তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। তিনি এপর্যন্ত আদর্শ সদর উপজেলায় ১৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,মাদ্রাসা প্রতিষ্টা করেছেন তার নিজস্ব অর্থায়নে। নগরবাসীর কাছে তার আবেদন এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে যেন তাকে ভোট দিয়ে নগরবাসীর সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়।

আ.ক.ম বাহাউদ্দিন বাহার

বর্তমানে কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য। এর আগে কুমিল্লা সদ্য বিলুপ্ত সদর পৌরসভার দু’দৃবারের চেয়ারম্যান,একবার উপজেলা চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি জেলা (দঃ) আ’লীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেন এই রাজনীতিবিদ। জেলার এই প্রভাবশালী নেতা আ.ক.মবাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লায় খুব জনপ্রিয়। আসন্ন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে তিনিও একজন মনোনয়ন প্রত্যাশি। দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে মত বিনিময়সহ বিভিন্নভাবে তিনিও গনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহন ও বিজয়ী হয়ে তিনি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র পদে আসীন হতে চান। একটি সুন্দর পরিচ্ছন্ন কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন গড়া তার লক্ষ্যে। এউদ্দেশ্য তিনি বলেন,আমি আশা করি নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এমপি পদ ছেড়ে আমি মেয়র পদে নির্বাচন করতে পারবো।

আলহাজ্ব ওমর ফারুক

বর্তমানে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের সহ-সভাপতি রাজনৈতিক জীবনের শুরুতে ছাত্র ইউনিয়নের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি রাজনীতিতে আসেন ১৯৬৫সালে। ১৯৬৮-১৯৬৯সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে ভিপি নির্বাচিত হয়। ১১দফা আন্দোলনে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলায় আহবায়ক পদে নেতৃত্বদেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ কালীন সময়ে ইষ্টান জোনে রিক্রুটিং অফিসের দায়িত্বে ছিলেন। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া এই রাজনীতিবিদ বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার ন্যাপ,সিপিবি,ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনীর কমান্ডার ছিলেন। ঐতিহাসিক বেতিয়ারা যুদ্ধে তিনি সরাসরি অংশনেন। ১৯৮০সালে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে মস্কোতে আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনে যোগদান করেন। কুমিল্লা (দঃ) জেলা আ’লীগের সাবেক দপ্তর সম্পাদক। তিনি ১/১১’র সময় কেন্দ্রীয় কৃষকলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাজনৈতিক জীবনে দু’বার কারাবরন করেন এই নেতা। তিনিও নিবাচনী প্রর্চারনায় মাঠে আছেন। তারও বিশ্বাস মনোনযন পাবেন। আর যদি মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে বিজয়ী হন। তবে,কুমিল্লার দুঃখ জলাবদ্ধতা নিরসনে ভূমিকা রাখবেন।

আবুল কাসেম রৌশন

বর্তমান নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক ১৯৭৫সালে স্কুল জীবন থেকেই বঙ্গবন্ধ’র আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। এরপর কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শেষে কুমিল্লা আ’লীগের রাজনীতি শুরু করেন। বর্তমানে নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদকের পদ ছাড়াও তিনি কুমিল্লা (দঃ) জেলা আ’লীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য। তিনি একটি আধুনিক সিটি কর্পোরেশন গড়ার লক্ষে নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হলে কাজ করবেন বলে জানান।

নুর-উর রহমান মাহমুদ তানিম

তরুন এই আ’লীগ নেতা স্কুল জীবনে থাকতেই রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে ভিপি ও জিএস পদে নির্বাচিত হন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বাস্তবায়ন ও কোটা প্রথা বিরোধী আন্দোলনের আহবায়ক ছিলেন।বিএনসিসি থেকে ১৯৮৫ ও ১৯৮৬সালে দু’বার সেরা ক্যাডেট,জাতীয় টেলিভিন বিতর্ক প্রতিযোগীতায় সেরা বিতার্কিক, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য,কুমিল্লা (দঃ) জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ছিলেন। রাজনৈতিক প্রতিংিসার শিকার হয়ে এই তরুন রাজনীতিবিদ গ্রেফতার,নির্যাতন ও কারাবরন করেন। ১৯৯০সালে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ও জেলে যেতে হয় তাকে একাধীকবার। কুমিল্লার আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীর তালিকায় থাকা এই রাজনীতিবিদ বলেন,কুমিল্লাকে একটি সুন্দর বসবাস যোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলাই তার লক্ষ্য।

আনিছুর রহমান মিঠু

সদ্য আইন পেশায় যুক্ত হওয়া এই রাজনীতিবিদ কিছু দিন আগে ছাত্র রাজনীতি ছেড়ে মূল দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। স্কুল জীবনে শুরু করেন ছাত্রলীগের রাজনীতি। তারপর ১৯৮৮সালে ভিক্টোরিয়া কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে সহ বহি ঃ ক্রীড়া সম্পাদক পদে নির্বাচন ও জয়লাভ। একই সালে ওই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক শাখার আহবায়ক নির্বাচিত। ১৯৮৯তে একই কলেজ থেকে এজিএস পদে নির্বাচন। ১৯৯০সালে কুমিল্লা (দঃ) জেলা ছাত্রলীগের ৪১সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সদস্য। ১৯৯৭ সালে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক পদলাভ। ২০০১সালে জেলা ছাত্রলীগের সদস্য সচিব, ২০০২ সালে ঢাকায় কাউন্সিলরদের ভোটে ৪২১ জনের মধ্যে ৩৪১ভোট পেয়ে কুমিল্লা (দঃ) জেলা ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক পদে আসীন। চলতি বছরে জেলা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠিত হলে তিনি বর্তমানে মূল দলের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন অল্পকিছুদিন হলো। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে তিনি প্রতিদিনই গনসংযোগ,পথসভা অব্যাহত রেখেছেন। তার বিশ্বাস,দল তাকে মনোনয়ন দিবে।

Check Also

দাউদকান্দিতে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু

হোসাইন মোহাম্মদ দিদার :কুমিল্লার দাউদকান্দিতে শান্তা বেগম (২৪) নামে এক গৃহবধুর রহস্যজনক মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। ...