এস এম নাজমুল হক ইমন, বগুড়া জেলা প্রতিনিধিঃ
ভিক্ষুক মানেই সহায় সম্বলহীন ছিন্নমূল মানুষ। নিছক পেটের দায়ে অনণ্যোপায় হয়ে অন্যের কাছে হাত পেতে বাচার চেষ্টা করা। গাছ তলায়, ফুটপাত বা রাস্তার উপর পোকা মাকড়ের মতো পড়ে থাকা। বড়জোড় ভাঙ্গাচোরা বস্তি ঘরের সংসার। বৃষ্টি এলে ভিজবে। রোদ এলে পুরবে। এটাই জানে আমাদের প্রচলিত সমাজ। কিন্তু আমরা কি জানি? এদের ভিতরের খবর। আমাদের প্রাচীন শহর সান্তাহারের কথায় ধরি না কেন?
বগুড়ার প্রাচীনতম শহর, রেলওয়ে জংশনের শহর সান্তাহার। রাজধানীর মতো আমাদের এই শহরে ভিক্ষুকদের আনাগোনা সপ্তাহের সাতদিন না থাকলেও প্রতি সপ্তাহের বৃহস্পতিবার সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই শত শত ভিক্ষুক সমাগম সান্তাহার শহরে। আর এই দূর দূরান্ত থেকে আসা ঝাকে ঝাকে ভিক্ষুকদের ভিড় শুরু হয় দোকানগুলোর সামনে। দল বেধে থাকে তারা; আর তাদের প্রতিটি দলে কম করে হলেও ৯/১০ জন থাকে। কিন্তু মোট কথা হলো এই যে, এতো ভিক্ষুক সান্তাহারে শহরে আসে কিভাবে? তারা কেউ সান্তাহার বা এর কাছের কোন এলাকার নয়। তাহলে এরা কোথাকার কে? আসলে বিনা পুজির এই ব্যবসায় লাগে না কোন লাইসেন্স, লাগে না কোন প্রতিষ্ঠান। হাত বাড়াও ভিক্ষা নাও আর সেই টাকা পকেটে তোলো। বড়ই আশ্চর্যজনক কথা হলো তারা নানান সাজে আসে ভিক্ষা করতে তবে সেই সাজটা হলো গরীবি সাজ। এক অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, সান্তাহারে যে সমস্ত ভিক্ষুকদের ভীড় হয় তারা আসে মূলত রংপুর, গাইবান্ধা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নাটোরের ভিন্ন জায়গা থেকে। সেই সাথে তো আমাদের সান্তাহারের এবং পাশের জেলা নওগাঁর ভিক্সুকরা আছে।
তারা কেন আসে সান্তাহারে। এ নিয়ে অনেক প্রশ্ন? সান্তাহার আসলে একটি ব্যবসায়ী রুট শহর। ছোট শহর হলেও এই শহরে যেমন মানুষের আনাগোনা বেশি তার উপর ব্যস্ত ও প্রতিষ্ঠানের শহর। সব মিলিয়ে সান্তাহারের গুরুত্ব ভিক্ষুক মহলে অনেক তাই তারা যারা ভিক্ষা করেন তারা এই ছোট্ট সান্তাহার শহরকে ব্যবসার প্রধান ক্ষেত্র বানিয়েছে। এছাড়া এক জেলার মানুষ অন্য জেলাকে ভিক্ষা করলে মানুষও চিনবে না এই কারনটাও বেশ গুরুত্বপূর্ন তাদের কাছে।
ভিক্ষুকরা সান্তাহারে ভিক্সা করতে এসে অবশ্য অনেক মজারই কান্ড করে বসেন। শুধু মজার কান্ড নয় তারা একেবারেই দলবল নিয়েই বের হয় ভিক্ষা করতে। স্বামী, সন্তান থেকে শুরু করে অনেকে আছে তার পূরো পরিবার এনে রাস্তায় ভিক্ষা করায়। প্রথম দিকে ভিক্ষুকদের দেওয়া যেত ২৫ পয়সা, তারপর ৫০ পয়সা, তারপর ১ টাকা কিন্তু বর্তমানে সান্তাহার শহরে ভিক্ষুকদের চাহিদা মাথা পিছু ২ টাকা। এর কম টাকা দিলে তারা তো নেয়ই না বরং আরো দুই চারটে কথা তারা শুনিয়ে দিবে।
সমাজে অনেক পেশার মতো ভিক্ষাবৃত্তিতেও রয়েছে নানা ছলচাতুরি ও কৌশল। দৈহিক পুঙ্গত্ব, বার্ধক্য কাজে লাগিয়ে যেমন ভিক্ষা করতে দেখা যায় তেমনি কোনো জীবন্ত ব্যক্তিকে লাশ সাজিয়ে ভিক্ষা করতে দেখা যায়। কাউ কাউ অসুখের চিকিৎসা করানোর কথা বলে একটি প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে, পুষ্ঠিহীন রুগ্ন শিশুকে কোলে নিয়ে, কেউ বা ময়লা ও ছেড়া কাপড় পড়ে ভিক্ষা করে। বোবা সেজে, মেয়ের বিয়ের ও বাবা মায়ের বা অন্য কোন স্বজনের মৃত্যুর কথা বলে মানুষের কাছ থেকে হাত পেতে টাকা নেয় বা ভিক্ষা করে। ব্যাগ আর টাকা পয়সা চুরি বা ছিনতাই হয়েছে বলে, কেউ কেউ বাড়ি যাওয়ার জন্য ভাড়ার নামে ভিক্ষা করে।
সান্তাহারে ভিক্ষাকদের কাছে শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হালকা যানযটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ভিক্ষুকদের কারনে অনেক সাধারন মানুষকে বিভ্রান্তি পোহাতে হয়। সব মিলিয়ে কোন ভাবেই সান্তাহার শহর থেকে ভিক্ষুক না প্রতিরোধ করা গেলেও এই বাহিরে থেকে আগত ভিক্ষুকদের প্রতিরোধ করা দরকার।
ভিক্ষুকদের নিয়ে শহরে বিভ্রান্তি এই নিয়ে সান্তাহারের বিশিষ্ট চিকিৎসক এস এম শফি উদ্দীন বলেন, রাজধানী শহরের মতো আমাদের মতো যে সমস্ত ব্যস্ত শহর আছে সেখানেও ভিক্ষুকদের জন্য আইন প্রনয়ন করার দরকার। তা না হলে আজ যেমন হালকা বিভ্রান্তি নিয়ে আমরা আছি এই বিভ্রান্তিই একদিন চরম আকার ধারন করবে।
Check Also
করোনাযুদ্ধে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিমকে বুড়িচংয়ে সমাহিত
বুড়িচং প্রতিনিধিঃ করোনাযুদ্ধে পুলিশে প্রথম জীবন উৎসর্গকারী কনস্টেবল জসিম উদ্দিনকে (৩৯) কুমিল্লায় সমাহিত করা হয়েছে। ...