এস জে উজ্জ্বল :
বছরের শুরুতে বিক্ষোভের সূচনা হয় তিউনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট বেন আলীর বিরুদ্ধে । বিক্ষোব্ধ জনতাকে সামাল দিতে না পেরে টানা ২৩ বছরের ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে রাজনৈতিক আস্রয় নেন সৌদি আরবে। অস্থিরতার এই কারন খুজে বের করার প্রক্রয়ার মাঝেই শুরু হয় মধ্যপ্রাচ্যে অন্যতম পরাশক্তি এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সমর্থনপুষ্ট বলে ক্ষ্যাত মিসরের প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিরুদ্ধে। ঘোলাটে হতে থাকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট । মুসলিম ব্রাদারহুডের নেতৃত্বে আন্দোলনের চরম মুহুর্তে ইসরাইল এবং পশ্চিমা শাসক গোষ্ঠির অবস্থান নিয়ে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। ইসরাইল বরাবরই চাইছিল মোবারক ক্ষমতায় থাকুক, তবে আমেরিকার অবস্থান স্পষ্ট ছিল না কোন সময়ই, উইকিলিকস সাময়িকিতে প্রকাশিত তথ্য মতে বিক্ষোভকারীদের অর্থের যোগান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; আর বাইর থেকে যুক্তরাষ্ট্র দেখাচ্ছিল তারা মধ্যপন্থা অবলম্বন করছে । অবশেষে টানা ১৮ দিনের বিক্ষোভের মাথায় ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন মোবারক। শেষ হয় তার ৩০ বছরের দীর্ঘ শাসনামল। বেরিয়ে আসে মোবারকের দুর্নিতীর অনেক অজানা তথ্য। সুইস ব্যাংকে আটকা পড়ে তার বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার । মোবারক মিশরের রাজধানী কায়রো ছেড়ে সপরিবারে দেশটির পর্যটন নগরী শার্ম আল শেখ-এ অবস্থান করছেন। এর সব কিছুই এখন ইতিহাস, সদ্য ঘটে যাওয়া হলেও। কারন মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিতে আরও চমকপ্রদ ঘটনার পূর্বাভাস পাওয়া যাচ্ছে সাম্প্রতিক ঘটনাবলীতে ।
ইতিমধ্যে বাহরাইন ও জর্ডানে সংক্ষিপ্ত আকারে বিক্ষোভ হয়েছে দেশ দুটির বাদশাহ’র বিরুদ্ধে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সতর্ক করে দিচ্ছে যেকোন ধরনের পরিস্থিতির জন্য। এরই মধ্যে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটে মধ্যপ্রাচ্যের প্রাণকেন্দ্র সৌদি আরবে ।দেশটিতে কোন প্রকার রাজনৈতির কর্মকান্ড নিষিদ্ধ থাকলেও এরই মধ্যে সেখানে গঠন করা হয়েছে বাদশাহী শাসন উপেক্ষা করে রাজনৈতিক দল। আর তাতে পশ্চিমা শাসকগোষ্ঠীর মদদ স্পষ্ট পরবর্তী ঘটনা প্রবাহে। ঘটনার এখানেই শেষ নয়, ইতিমধ্যে বিক্ষোভ চরম আকার ধারন করেছে ইরান ও লিবিয়ায়।
লিবয়ার দীর্ঘ সময়ের শাসক একনায়ক গাদ্দাফিকে গদি থেকে নামানোর জন্য শুরু হয়েছে বিক্ষোভ। দেশটির গণতন্ত্রকামীদের এ আন্দোলন সফল হলে মুয়াম্মার গাদ্দাফির ৪১ বছরের শাসনাবসান হবে। লিবিয়ার এই বিক্ষোভ অবশ্য এক পুরনো অধ্যায়েরই ফসল, ২০০৬ সালের এক বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ১৮ বিক্ষোভকারি নিহত হবার পর প্রতিবছর ১৭ ফেব্রুয়ারী দেশটিতে পালন করা হয় এই বিক্ষোভ। তবে সাম্প্রতিক আরব রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তা এবার নতুন মাত্রা পাচ্ছে । অন্যান্যবারের মত একে আর সাধারন বিক্ষোভ বলা যাচ্ছেনা, বরং এ থেকেই সৃষ্টি হতে পারে আরেকটি পতনের মঞ্চ। কারন পশ্চিমা বিরোধী এবং সমাজতান্ত্রিক মুয়াম্মার গাদ্দাফির রাজনৈতিক অবস্থান তথা মতাদর্শই হয়তো তার প্রতিপক্ষ হয়ে দাড়াতে পাড়ে।
এভাবেই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট চরম থেকে চরম আকার ধারন করছে। আগামী দিনগুলিতে তা কোন দিকে মোড় নেয় তাই এখন ভাবিয়ে তুলছে মধ্যপ্রাচ্যসহ নিকটপ্রাচ্য ও দূরপ্রাচ্যের শাসকশ্রেনীকে। এবং চড়মভাবে হুমকির মুখে পড়ছে আরব ভূখন্ডগুলো স্থিতিশীলতা । আর এ ধারা অব্যাহত থাকলে আরবরাতো বটেই আমরাও তথা বাংলাদেশের ক্ষতিটাওযে কম হবে তা কিন্তু নয়, কারন শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতেই রয়েছে প্রায় পঞ্চাশ লক্ষ বাঙ্গালী শ্রমিক।