জামাল উদ্দিন স্বপন:
লাকসাম পৌরসভার আসন্ন মেয়র নির্বাচনে বড় দুই দলে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় ক্ষতির কারন হয়ে দাড়িয়েছে আওয়ামীলীগ ও বিএনপির দলীয় দুই মেয়র প্রার্থীর। এতে দলীয় প্রার্থীদের নির্বাচনে জয়লাভ করা অনেকটা জটিল হয়ে উঠেছে। তবে এ পর্যন্ত লাকসাম পৌরসভায় যে কয়টি নির্বাচন হয়েছে তাতে দলীয় প্রার্থীরাই বিজয়ী হয়েছিল।
এবারের নির্বাচনে আওয়ামীলীগদলীয় প্রার্থী হিসেবে যুবলীগ সভাপতি এডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরার মনোনয়ন ঘোষনা করা হয়। গত ১৫ ডিসেম্বর দলীয় কার্যালয়ে তৃনমূল নেতাদের মতামতের উপর ভিত্তি করে দলের আহবায়ক মোঃ তাজুল ইসলাম এম.পি ওই প্রার্থীর নাম ঘোষনা করেন। এ দিকে ওই দিন রাতেই আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগের যুগ্ম আহবায়ক এডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন ডেকে মেয়র প্রার্থী হিসেবে আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাজী আবুল কাশেমের নাম ঘোষনা দেন।
মনোনয়ন প্রসঙ্গে এডভোকেট ইউনুছ ভূইয়া বলেন, স্থানীয় সাংসদ মোঃ তাজুল ইসলাম আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও পরিক্ষীত নেতাদের মতামত উপেক্ষা করে তার অনুগত এক কনিষ্ঠ যুবলীগ নেতাকে নির্বাচনে প্রার্থী দিয়েছেন। যার এলাকায় গ্রহনযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন আছে।
এদিকে সংসদ সদস্য কর্তৃক মনোনয়ন প্রাপ্ত এডভোকেট রফিকুল ইসলাম হিরা বলেন, ওই তারিখে উপস্থিত তৃনমূল নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম আমাকে মেয়র প্রার্থী হিসাবে ঘোষনা করেন। আমি মনে করি বিপুল সংখ্যক আওয়ামী সদস্যের মতামতকে উপক্ষো করে এডভোকেট ইউনুছ ভূঁইয়া আওয়ামীলীগের অপর প্রার্থীকে আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে দাড় করিয়ে তার ত্যাগী নেতা হিসাবে দাবী করা প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। আমি আশাবাদী এডভোকেট ইউনুছ ভূইয়া পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতা দাবী করলে উনি আমার বিরোধিতা করবেন না। মুরব্বী হিসাবে আমি উনাকে যথেষ্ট শ্রদ্ধা করি।
অপরদিকে ১৮ ডিসেম্বর লাকসাম উপজেলা বিএনপি-র অঙ্গসংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে তাদের মতামতের ভিত্তিতে লাকসাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরু লাকসাম পৌরসভার আসন্ন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসাবে জুয়েলারী ব্যবসায়ী সুভাস বনিকের নাম ঘোষনা করে তাকে জয়ী করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। অন্য দিকে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান বাদলের মেয়র প্রার্থীতা নিয়ে সভাপতি সাইফুল ইসলাম হিরু বলেন যে দলের প্রতি বিশ্বস্ত নয় তাকে তো জেনে শুনে মনোনয়ন দেয়া যায় না। নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতেই আমরা সুভাস বনিককে মনোনয়ন দিয়ে নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে দাড় করিয়েছি।
বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও অপর মেয়র প্রার্থী আবদুর রহমান বাদল বলেন, আমরাই বিএনপির মূলধারা। আমার প্রার্থীতা নিয়ে চক্রান্ত হয়েছে। বিএনপির একাংশের নেতা চৈতী গ্র“পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল কালাম ১৯ ডিসেম্বর বিএনপির অপর কার্যালয়ে কর্মী সম্মেলন ও সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন। ওই সম্মেলনে বিপুল সংখক নেতাকর্মীর উপস্থিতি ও সমর্থনে বিএনপির প্রার্থী হিসাবে দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুর রহমান বাদলের নাম ঘোষনা করে নির্বাচনে লাকসাম পৌরসভার মেয়র হিসেবে তাকে নির্বাচিত করে খালেদা জিয়ার হাতকে আরো শক্তিশালী করার আহবান জানান। তিনি বলেন আপনারা তৃনমূলের নেতাকর্মীরা সকল লোভ লালসার উদ্ধে থেকে বাদলকে মেয়র হিসাবে নির্বাচিত করার জন্য দিন রাত কাজ করবেন এ ভরসা আমার আছে।
এ দিকে চারদলীয় জোটের অন্যতম শরীক জামায়াতে ইসলামী এবার বিএনপির সাথে নানা টানপোড়নের কারনে একক প্রার্থী হিসাবে সংগঠনের তরুন নেতা দেওয়ান মাহবুব-ই ছোবহানী খোকনের নাম ঘোষনা করেছে। এর ফলে আওয়ামীলীগের চেয়ে বিএনপির ঝুঁকি আরো বেড়েছে।
পৌর নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থীর প্লাস পয়েন্ট হলো পৌর এলাকার বুক চিরে ডাকাতিয়া নদী। এ নদীর পূর্ব ও পশ্চিমপাড় পৌর এলাকার ভোটারদের ভোট ভাগ করে দিয়েছে। ডাকাতিয়ার পশ্চিম পাড়ের একক প্রার্থী জামায়াত থেকে, আর এ পাড়ে রয়েছে প্রায় সাড়ে ১০ হাজার ভোট। আঞ্চলিকতার প্রভাবে কট্টর দলীয় ভোট ছাড়া এ ভোট ব্যাংকের একটা বড় অংশই জামায়াত প্রার্থীর পক্ষে যাওয়ার সম্ভাবনা খুব বেশী। অপর দিকে অপর ৫ প্রার্থী ডাকাতিয়ার পূর্ব অঞ্চলে হওয়ায় কম বেশী সকল প্রার্থীর ভোট ভাগাভাগি হবে।
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে ভাইয়া গ্র“প (নাবিস্কো) অব ইন্ডাষ্ট্রিজের অন্যতম পরিচালক আলহাজ্ব মফিজুর রহমান দলীয় প্রার্থীদের চেয়ে কোন অংশেই পিছিয়ে থাকবেনা বলে ভোটারদের ধারনা। কারন ইতিপূর্বে তার ছোট ভাই সাবেক পৌর মেয়র আলহাজ্ব মজির আহমদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। ভাইস চেয়ারম্যানের দু’টি পদেই জামায়াত প্রার্থীরা বিজয়ী হয়েছিলেন।
বিগত পৌর নির্বাচন গুলোতে লাকসামের সকল পৌর মেয়র ডাকাতিয়ার পূর্ব পাড় থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন। ডাকাতিয়ার পশ্চিমপাড়ে উপজেলা পরিষদ, পশ্চিমগাঁও এর ঐতিহাসিক নবাব বাড়ী, নবাব ফয়জুন্নেছা সরকারী কলেজ থাকা স্বত্তেও পৌর উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমপাড় সব সময় ছিল তুলনামূলক অবহেলিত। উন্নয়ন কর্মকান্ডে ডাকাতিয়ার পশ্চিম পাড়ের জনগোষ্ঠীর সাথে সব সময় বিমাতাসুলভ আচরন করা হয়েছে বলে সাধারন ভোটারদের অভিযোগ। তবে এবারের নির্বাচনে ডাকাতিয়ার পূর্বপাড় ও পশ্চিমপাড় আঞ্চলিকতার প্রভাবে এলোমেলো হতে পারে মেয়র প্রার্থীদেও ভাগ্য। তাই এবারের নির্বাচনে নাটকীয় অনেক কিছুই ঘটে যে কেউ মেয়র নির্বাচিত হলে অবাক হওয়ার কিছই থাকবেনা।
এ ছাড়াও মহাজোটের অপর শরীক জাতীয়পাটীর দলীয় প্রার্থী মজিবুল্লা খসরু নির্বাচনে অংশ নিলেও আওয়ামী ভোট ব্যাংকে তেমন কোন আঘাত করতে পারবেনা।
আগামী ২ জানুয়ারী এ পৌরসভার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন এবং আগামী ১৮ জানুয়ারী লাকসাম পৌরসভার ভোটগ্রহন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মাঝে প্রার্থীরা সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ভোটারদের দ্বারে দ্বারে চষে বেড়াচ্ছেন। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে উপস্তিত থেকে নিজেদের জন্য ভোট প্রার্থনা করছেন। লাকসাম পৌর এলাকার মোট ভোটার সংখ্যা ৩৬ হাজার ৬৫৫ জন। পৌর এলাকার ৯টি ওয়ার্ডের মোট ভোট কেন্দ্র রয়েছে ১৪টি। নির্বাচনে মেয়র পদে ১০জন, ৯টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে ৬০ জন এবং ৩টি সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১০ জন মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সাধারন ভোটারদের ধারনা মেয়র ১০ প্রার্থীর মধ্যে ৬ জন ছাড়া অন্যরা সবাই ড্যামী প্রার্থী।
Check Also
লাকসাম-মনোহরগঞ্জের বিএনপি’র সাবেক এমপি আলমগীরের জাতীয় পার্টিতে যোগদান
নিজস্ব প্রতিবেদকঃ– কুমিল্লা-১০ (লাকসাম-মনোহরগঞ্জ) বিএনপি’র সাবেক এমপি এটিএম আলমগীর জাতীয় পার্টিতে যোগদান করেছেন। সোমবার জাতীয় ...