স্টাফ রিপোর্টার :
দিনভর কর্মব্যস্ত নাগরিক ব্যস্ততায়, জীবনের জটিল আবর্তে ঘুরপাক খেতে খেতে কান্ত-শ্রান্ত মানুষগুলো যখন হাপিয়ে ওঠে, তখনই কুজে ফিরে একটু নির্মল আনন্দের। যার জন্য চাই নির্মল পরিবেশে প্রকৃতির কোমল স্পর্শ। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য- বাংলাদেশের অন্যতম জেলাশহর কুমিল্লার লক্ষ লক্ষ মানুষের এই নির্মল আনন্দটুকু পাবার মতো কোনো পরিকল্পিত স্থান নেই। পরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠেনি কোনো পার্ক কিংবা অবসর বিনোদন কেন্দ্রের। তাই একমাত্র ধর্মসাগর পাড়েই শেষ বিকেলে ঢল নামে সকল বয়সের হাজার হাজার মানুষের।
উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের মাপকাঠি বিবেচনায় বাংলাদেশের প্রথমসারির জেলাশহরগুলির মাঝে কুমিল্লা অন্যতম। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থার প্রায় সকল সুযোগ-সুবিধাই এখানে পাওয়া যায় অনায়াসে। শিক্ষা, চিকিৎসা ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অনেক জেলাশহরকে পেছনে ফেলবার ক্ষমতা রাখে কুমিল্লা জেলা। কিন্তু অবসর বিকেলে একটু নির্মল বাতাসের খুজে হাহাকার করতে হয় কুমিল্লাবাসীকে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, কুমিল্লা এবং এর আশপাশে জনপদ গড়ে উঠে প্রাচীনকাল থেকে। সপ্তম থেকে অষ্টম শতকে দেব বংশ এবং দশম শতকে চন্দ্র বংশের শাসনামলে এই অঞ্চলে সমৃদ্ধ জনপদের নিদর্শন পাওয়া যায়। ১৭৯০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী বর্তমান ত্রিপুরা এবং বৃহত্তর কুমিল্লা নিয়ে ত্রিপুরা জেলা গঠন করে। পরবর্তীতে দেশ ভাগের পর ১৯৬০ সালে বর্তমান কুমিল্লার নতুন নামকরণ হয়। সুপ্রাচীন ইতিহাসে সমৃদ্ধ কুমিল্লার অনেক অঞ্চলে পাওয়া যায় বহু পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। এত কিছুর পরও কুমিল্লায় গড়ে ওঠেনি কোনো অবসর বিনোদন কেন্দ্রের। বিকল্প হিসেবে ধর্মসাগরের পাড়কেই বেছে নিয়েছে কুমিল্লাবাসী।
প্রায় ৩৫ একর বিস্তীর্ণ ধর্মসাগরের পশ্চিম তীরের এক চিলতে জায়গাই এখন কুমিল্লাবাসীর স্বপ্নের পার্ক। ধর্মসাগরের উত্তর পাশে শহরের একমাত্র পার্কটি এক প্রকার পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তৈরি করার পর এখানে আর কখনো সংস্কারের ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে হয় না। এমনিতেই অপ্রতুল জায়গা তার ওপর বিনা সংস্কারে পড়ে থাকা পার্কে সাধারণত কারও পদচারণা চোখে পড়ে না।
আর আছে জেলার একমাত্র চিড়িয়াখানা। বখাটেদের আনাগোনা, চিড়িয়াখানার পর্যাপ্ত প্রাণীর স্বল্পতা ও প্রশাসনের উদাসীনতায় সেখানেও পা বাড়ায় না কেউ। এমতাবস্থায় কুমিল্লার আশপাশে খালি জায়গায় বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলার পাশাপাশি ধর্মসাগর, পার্ক ও চিড়িয়াখানার সংস্কার কুমিল্লাবাসীর প্রাণের দাবী। শহরের উত্তর পাশে গোমতী নদীর তীর ঘেষে তৈরি হতে পারে বৃহদাকার অবসর বিনোদন কেন্দ্র। পাশাপাশি বর্তমান পার্ক ও চিড়িয়াখানাটির সংস্কার করে দর্শক আকৃষ্ট করা যায় অনায়াসে।
ধর্মসাগর কুমিল্লার সুপ্রাচীন ঐতিহ্যগুলোর মধ্যে অন্যতম। বিস্তীর্ণ এই জলাধারটির তীরে আকর্ষণীয় করে দর্শকদের মনোরঞ্জন করা যায়। মাত্র একটি প্রমোদ তরী দিয়ে ধর্মসাগর ভ্রমণের সুযোগ আছে। এখানে আরও আকর্ষণীয় নৌকা যুক্ত করে কুমিল্লাবাসীকে প্রণোদনা দেয়া যায়। এছাড়াও শহরের এখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রাণীর দিঘী, উজির দিঘী, নানুয়ার দিঘীসহ ডজনখানেক ছোটবড় জলাধার। এগুলোকে কেন্দ্র করেও গড়ে তোলা যায় বিনোদন কেন্দ্র।
Check Also
কুমিল্লায় ডিবির অভিযানে ১৭ হাজার পিস ইয়াবাসহ ডাক্তার গ্রেফতার
স্টাফ রিপোর্টারঃ- রাজধানীতে ইয়াবা পাচারকালে ১৭ হাজার ইয়াবাসহ গ্রেফতার হয়েছেন মো. রেজাউল হক (৪৫) নামের ...