
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক ও অভিভাবক সূত্রে জানা যায়, রাজনীতিমুক্ত কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পরও অতিমাত্রায় রাজনীতি চর্চা, বার বার সংঘাত-সংঘর্ষ এবং এর প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার কারণে ছাত্র-ছাত্রীরা এখন মারাত্মক সেশনজটে পড়ে আছে। অনিশ্চিত ও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। একাউন্টিং বিভাগের ছাত্রী নূসরাত বলেন- আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয় খুলুক, সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ হোক। মার্কেটিং বিভাগের ছাত্র শাহেদুল ইসলাম জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের আজকের এ অবস্থার জন্য প্রশাসনই দায়ী। ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের কার্যকলাপ, শিক্ষক গ্রুপিং বন্ধ করে ক্যাম্পাসে সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার জন্য সকল স্থানীয় এমপিদের যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করা প্রয়োজন। লোকপ্রশাসন বিভাগের ছাত্র রনি বলেন, কিছু সংখ্যক ছাত্র-শিক্ষকের অপরাজনীতির কারণে হাজারো শিক্ষার্থীর জীবন বিনষ্ট হতে পারে না। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করে দ্রুত ক্যাম্পাস খুলে দেয়ার দাবী জানাচ্ছি। প্রয়োজনে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বিষয়টি সরাসরি দেখা উচিত। অর্থনীতি বিভাগের এক ছাত্রী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, সাংসদদের কাজ আইন প্রনয়ন করা, আধিপত্য বিস্তার করা নয়। এটা রাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাস, রাজনীতিবিদদের তা মনে রাখা উচিত। ইংরেজী বিভাগের ছাত্র সবুজ বলেন, উপাচার্য থাকবে কি থাকবে না, কারা টাকা দিলো কারা দিলো না, ভর্তির টাকা কে কত পাবে- এগুলো আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। এগুলোর জন্য ক্যাম্পাস কেন বন্ধ থাকবে? আমরা চাই ক্যাম্পাস বহিঃশক্তির নিয়ন্ত্রন মুক্ত হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর অভিভাবক জামালউদ্দিন বলেন, অঙ্গীকারনামা ভঙ্গ করে যে ছাত্ররা রাজনীতি ও বিশৃংখলা সৃষ্টি করছে এবং যে সকল শিক্ষক তাদেরকে মদদ দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আরেক ছাত্রের অভিভাবিকা নাজমা আক্তার চৌধুরী বলেন, শিক্ষকদের কোন্দলের কারনে আমাদের সন্তানদের ক্ষতি হতে পারে না। আমরা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীসহ সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। সাবেক রেজিস্ট্রার (বর্তমানে ওএসডি) মজিবুর রহমান বলেন, ছাত্র রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করতে না পারা দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোরই লক্ষণ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষক বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও কতিপয় শিক্ষকদের সরাসরি তত্ত্বাবধানেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি শুরু হয়। “রাজনীতিমুক্ত” শব্দটির যথাযথ বাস্তবায়ন প্রয়োজন। ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রভাষক তাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে ব্যর্থ হলে দায়িত্ব ছেড়ে দেয়া উচিত।
সামগ্রিকভাবে সকলেই চান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সুষ্ঠু পরিবেশ। সকলেরই প্রত্যাশা ও দাবী, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস নিয়মিত ছাত্র-শিক্ষকদের পদচারণায় মুখরিত থাকুক। আর এ জন্য প্রত্যেককেই স্ব-স্ব অবস্থান থেকে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে। বিশেষ করে সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এদিকে সজাগ ও সচেতন দৃষ্টি দিতে হবে। প্রয়োজনে কঠিন সিদ্ধান্তও নিতে হবে।